আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) অনুমোদনের জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে যাচ্ছে ভারতের করোনা টিকা কোভ্যাক্সিনের। সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মার্গারেট হ্যারিস জানিয়েছেন, সব ঠিক থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ডব্লিউএইচওর জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমোদন পাবে কোভ্যাক্সিন।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক সংবাদ সম্মেলনে মার্গারেট হ্যারিস বলেন, ‘কোভ্যাক্সিনের যাবতীয় তথ্য ডব্লিউএইচওর টেকনিক্যাল উপদেষ্টা কমিটির চুড়ান্ত পর্যালোচনার অধীনে আছে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে, এবং কমিটির সদস্যদের কেউ যদি তথ্যে কোনো প্রকার সমস্যা খুঁজে না পান, সেক্ষেত্রে আগামী ২৪ ঘণ্টা বা তার কিছু বেশি সময়ের মধ্যেই ডব্লিউএইচওর স্বীকৃতি পাবে কোভ্যাক্সিন।’
গত ১০ জুলাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান জানিয়েছিলেন, জরুরি প্রয়োজনে ব্যাবহারের স্বীকৃতি পেতে ডব্লিউএইচওর নিয়ন্ত্রক বিভাগকে যেসব তথ্য প্রদান করা জরুরি ছিল,তার সবই পাঠিয়েছে কোভ্যাক্সিনের প্রস্তুতকারী কোম্পানি ভারত বায়োটেক।
২০২০ সালের শেষের দিকে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের রাজধানী হায়দ্রাবাদভিত্তিক ওষুধ কোম্পানি ভারত বায়োটেক তাদের উদ্ভাবিত করোনা টিকা কোভ্যাক্সিন বাজারে আনে। এখন পর্যন্ত এটি ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে উৎপাদিত একমাত্র করোনা টিকা।
এই টিকাটি প্রস্তুত করা হয়েছে মৃত ও বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত করোনাভাইরাস দিয়ে। করোনাভাইরাসের যে নমুনাটি এই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে- ভারত বায়োটেককে তা সরবরাহ করেছে দেশটির জীবাণুবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি।
কোভ্যক্সিন দুই ডোজের করোনা টিকা। এটি সংরক্ষণ করতে হয় ২ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। গত ৩ জুলাই কোভ্যাক্সিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের তথ্য প্রকাশ করেছে ভারত বায়োটেক। সেখানে বলা হয়েছে, করোনা প্রতিরোধে প্রায় ৭৮ শতাংশ কার্যকর কোভ্যাক্সিন।
চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি থেকে ভারতে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার। এই কর্মসূচিতে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা টিকার ভারতীয় সংস্করণ কোভিশিল্ড, যেটি প্রস্তুত করেছে ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেকের টিকা কোভ্যাক্সিনকে অনুমোদন দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ভারতের টিকাদান কর্মসূচিতে কোভ্যাক্সিন ও কোভিশিল্ড- দু’টি টিকাই ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া ব্রাজিলসহ আরও কয়েকটি দেশেও অনুমোদন পেয়েছে কোভ্যাক্সিন।
করোনায় জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য এ পর্যন্ত ৬ টি টিকার অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। এগুলো হলো- ফাইজার-বায়োএনটেক, অ্যাস্ট্রাজেনেকা (সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত), অ্যস্ট্রাজেনেকা (ইউরোপে উৎপাদিত), জনসন অ্যান্ড জনসন বা জ্যানসেন, মডার্না ও সিনোফার্ম।
কোভ্যাক্সিন অনুমোদন পেলে এই সংখ্যা পৌঁছাবে সাতে।
এদিকে, কোভ্যাক্সিন ডব্লিউএইচওর অনুমোদন না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন বিদেশ গমনে ইচ্ছুক ভারতীয়রা। কারণ, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে এখনও স্বীকৃত করোনা টিকা নয় কোভ্যাক্সিন।
ফলে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে কোভ্যাক্সিনের ডোজ নেওয়া ভারতীয়দের। এই সমস্যা সমাধানের পথ আপাতত একটিই- ডব্লিউএইচওর স্বীকৃতি।