নিজস্ব প্রতিবেদক:
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়নের বেদাখালী খালের প্রশস্ত প্রায় দেড়শ ফুট। ওই খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ৪০ ফুট। তবে নির্মাণ করা হয়নি কোনো সংযোগ সড়ক। ফলে সেতুটি কোনো কাজেই আসছে না এলাকাবাসীর।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বেদাখালী খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মোট ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৩৪৬ টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সেতুর দুই পাশে খালের ওপর মাটি দিয়ে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। সেতুর এক পাশে ভাওয়াল ইউনিয়নের তুঘলদিয়া গ্রাম ও তুলঘদিয়া বাজার। অন্য পাশে মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপুট্টি গ্রাম। স্বাভাবিক চলাচলের জন্য সেতুর দুই পাশে কাঁচা বা পাকা সড়ক নির্মাণ না করায় এলাকাবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতুটির দুই পাশে মাত্র চার কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করে এ এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করা হলে সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ও ভাওয়াল ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাবে।
স্থানীয়রা জানান, বেদাখালী খালের ওপর সেতুটি নির্মাণ করা হলেও সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করায় সেতুটি তেমন কোনো উপকারে আসছে না। বিশাল চওড়া খালের ওপর মাত্র ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। সেতুরে দুই পাশে খালের ওপর মাটি দিয়ে যে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে, সেতু থেকে সেটি অনেক নিচু ও নিম্নমানের। সেতুর দুই পাশে কাঁচা বা পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়নি।
ফলে এলাকার উৎপাদিত ফসল নিয়ে ভ্যানগাড়ি, নসিমন, পিকআপ, ট্রাকসহ কোনো যানবাহন এই সেতু ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারছে না। সড়ক না থাকায় কোনো রোগী ও আহত মানুষকে দ্রুত হাসপাতালেও নেওয়া যায় না। বর্ষার সময় সেতুর দুই পাশ তলিয়ে গেলে হেঁটেও চলাচল করা সম্ভব হয় না।
কুমারপট্টি গ্রামের গৃহবধূ মমতাজ বেগম বলেন, বর্ষাকালে পারাপারের জন্য আমাদের সেই নৌকাই বেছে নিতে হয়। এই জায়গাটা উঁচু করা হলে আমরা বর্ষাকালেও রাস্তা এবং সেতু ব্যবহার করতে পারতাম। সেতু যেভাবে উঁচু করা হয়েছে সংযোগ সড়ক সেভাবে উঁচু করা হয়নি বলে এটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
তুঘলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা বিশাল হোসেন (১৯) বলেন, অনেককেই মাঝে-মধ্যে দেখি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে আসেন। রাস্তার এই হাল দেখে তারা ফিরে যেতে বাধ্য হন।
তিনি আরও বলেন, সেতুর দুই পাশেই গাড়ি যাওয়ার মতো রাস্তা নেই। দুই পাশে দেড় হাতের মতো গর্ত হয়ে আছে। আগে নৌকা ছিল, মানুষ নৌকায় পার হতো। এখন গাড়ি নিয়ে আসে অনেকেই। কিন্তু যেতে পারে না।
ওই এলাকার কলেজছাত্র রুদ্র রনি বলেন, সেতুটি নির্মাণে গাফিলতি করা হয়েছে। সেতুর সংযোগ সড়ক না থাকায় কেউ এর সুফল পাচ্ছে না। সেতুর দুই পাশে যেভাবে গর্ত হয়ে আছে তাতে বয়স্ক লোকদের চলাফেরা কষ্টকর।
খালের পূর্বপাড়ের মাঝারদিয়া ইউনিয়নের কুমারপট্টি গ্রামের বাসিন্দা রুস্তম আলী বলেন, এ সেতু এলাকাবাসীর কোনো কাজে আসছে না। বড় একটি সেতু প্রয়োজন। এত বড় একটি খালে এতটুকু একটি সেতু করে আমাদের বিপদের মুখে ফেলা হয়েছে। এটা একটা বাজে কাজ হয়েছে। আমরা এখানে একটি বড় সেতু চাই। কারণ আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যায় আছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) পরিতোষ বাড়ই বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের কাজগুলো সাধারণত স্থানীয় সংসদ সদস্য কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের সুপারিশের ভিত্তিতে করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
তিনি বলেন, এই প্রকল্পের অধীনে ৪০ ফুটের বেশি দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের সুযোগ নেই।
ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বলেন, এই সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। এর মাঝে আবার নির্বাচন গেল। আমি পুনরায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। যত দ্রুত সম্ভব সেতুটির সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নেব।
বিএসডি/ এলএল