গত শনিবার (৯ নভেম্বর) রাইদা পরিবহনের একটি বাসে আর্থিক সাহায্য চাইতে ওঠে শিশু মরিয়ম আক্তার। পরে রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চলা গাড়ি থেকে ছিটকে পড়ে। এতে গুরুত্বর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।
শুক্রবার ১৩ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই বাসের চালক রাজু মিয়া ও তার সহযোগী ইমরান হোসেনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ক্লুলেস এ ঘটনায় ৫০টির বেশি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বাসটি শনাক্ত করে র্যাব।
র্যাব সূত্রে জানায়, নিহত মেয়েটি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিল। ঘটনার দিন সে বাসে সাহায্য চাইতে উঠেছিল। এসময় হেলপার তাকে গেটলক বাস বলে গেট খুলে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেয়। এতে গুরুত্বর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে খন্দকার আল মঈন জানান, ঘটনার দিন সকালে রাজধানীর ভাটারার যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশের রাস্তায় উত্তরাগামী রাইদা পরিবহনের বাস থেকে মরিয়মকে ফেলে দেওয়া হয়। পরে মরিয়মের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা রনি মিয়া অজ্ঞাত গাড়িচালককে আসামি করে ভাটারা থানায় মামলা করেন।
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে মরিয়ম হেঁটে ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ফ্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম মরিয়মকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায়, এখানেই মৃত্যু হয় শিশু মরিয়মের।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, অর্থ সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশে বাসটিতে উঠেছিল মরিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে ওঠা এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় ঘাতক বাসের ড্রাইভার এবং হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং নজরদারি বাড়ানো হয়। এরপরই পৃথক অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন।
গ্রেফতার দুই জনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ড্রাইভার রাজু মিয়া এবং হেলপার ইমরান হোসেন প্রতিদিনের মতোই রাইদা পরিবহনের বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯০২২) নিয়ে পোস্তগোলা থেকে দিয়াবাড়ির উদ্দেশে রওনা করেন। সকালে যানবাহন ও যাত্রী কম থাকায় তারা দ্রুতবেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। বাসটি প্রগতি সরণির যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় পৌঁছালে মরিয়ম বাস যাত্রীদের কাছে সাহায্য চাইতে গাড়িতে ওঠে। হেলপার ইমরান হোসেন এসময় যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিচ্ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, ইমরান তখন শিশুটিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিতে চালক রাজুকে গাড়ির গতি কমাতে বলেন। এসময় মরিয়মকে দরজার কাছে গিয়ে নেমে যেতে বলা হয়। চালক রাজু কিছুদূর না যেতেই আবার থামতে বলায় বিরক্ত হয়ে বাসের গতি হালকা কমিয়ে, মরিয়মকে তাড়াতাড়ি নামতে বলে। মরিয়ম তাড়াহুড়ো করে নামার সময় হঠাৎ বাস চালক জোরে চালানো শুরু করেন। এতে মরিয়ম বাসের দরজার থেকে ছিটকে রাস্তায় পড়ে গুরুত্বর আহত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে চালক গাড়ি না থামিয়ে দ্রুতবেগে দিয়াবাড়ির দিকে চলে যায়। এরপর পোস্তগোলায় হাসনাবাদের একটি বাস ডিপোতে গাড়িটি রেখে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর বিষয়টি কাউকে না বলে আত্মগোপনে চলে যায়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, চালক রাজু মিয়া ছয় বছর ধরে রাইদা পরিবহনের গাড়ি চালায়। আর তার সহযোগী (হেলপার) ইমরান হোসেন আগে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করত। ছয় মাস আগে ইমরান রাইদা পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করে।
এদিকে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। আমরা অর্ধশতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বাসটিকে শনাক্ত করেছি।
বাসটির চালকের সঠিক কাগজপত্র ছিল কি না জানতে চাইলে র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে তাদের সব কাগজপত্র সঠিক ছিল। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আমরা তদন্ত করব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, বাসটি গেটকল সার্ভিস ছিল। তাই মেয়েটিকে হেলপার প্রেসার করেছিল যেন দ্রুত নেমে যায়। মরিয়মকে নামানোর সময় বাসের গতি ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে সে বাস থেকে রাস্তায় পড়ে মারা যায়।