বিসিএস!! এক স্বপ্নের নাম৷ এ স্বপ্নকে স্পর্শ করতে চলে এক দীর্ঘ লড়াই৷ জীবন ও জগতের এই লড়াইতে কেউ নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে পৌছে যায় সফলতার শিখরে কেউবা ভুল নির্দেশনায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন হতাশার জালে৷ তবে দৃঢ় সংকল্প আর একটি সঠিক নির্দেশনা আপনাকে নিয়ে যেতে পারে স্বপ্নের দোরগোড়ায়৷
বাংলাদেশে অধিকাংশ ছাত্রই ইংরেজিতে দুর্বল এবং যারা ক্যাডার হয়েই গেছে তারাও দুর্বল ছিল, আছে, থাকবে । ভবিষ্যতে তাই ঘটবে, পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হবে বলে মনে হয়না । তবে পড়াশোনায় কৌশলী হলে এবং নিয়মিত চর্চা করলে অনেক ভাল নাম্বার পাওয়া যায় । লিখিত পরিক্ষায় নিজেকে শানিত করার এই যুদ্ধ হয় আরও প্রকট৷ সকল বিষয়ের পাশাপাশি ইংরেজি এবং গনিতের প্রতি দিতে হয় একটু বিশেষ খেয়াল৷
সম্প্রতি ৪১ তম বিসিএস প্রিলি শেষ হবার পর সামনেই আসছে লিখিত পরিক্ষা৷ লিখিত পরিক্ষায় ইংরেজিতে ভালো করার নানা কৌশল নিয়ে বর্তমান সময়ের সাথে কথা বলেছেন ৩৬ তম বিসিএস পুলিশে (সুপারিশপ্রাপ্ত) সহকারী পুলিশ সুপার মোঃ রুবেল হক৷ তার মুখোমুখি হয়েছিলেন ওয়াহিদ তাওসিফ মুছা।
বর্তমান সময় – প্রথমেই জানতে চাইবো ইংরেজিতে কোন বিষয় গুলোর উত্তর দিতে হবে?
মোঃ রুবেল হক– পার্ট ‘এ’ এবং পার্ট ‘বি’ মিলিয়ে মোট ২০০ নম্বর বরাদ্দ আছে। রিডিং কম্প্রিহেনশন থেকে ১০০ নম্বর, যা সাধারণ প্রশ্ন ৩০, ব্যাকরণ ৩০, সম্পাদকের কাছে চিঠি ২০ এবং সারাংশ ২০ নম্বর যোগ করলে পাওয়া যায়। আর পার্ট বি-তে বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদ ২৫, ইংরেজি থেকে বাংলা ২৫ এবং রচনায় ৫০সহ মোট ১০০ নম্বর। সর্বমোট ২০০ নম্বর।
বর্তমান সময় – বিসিএস পরিক্ষায় প্রায় প্রতিটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ তবে ইংরেজিতে এই গুরুত্ব আরও বেশি হবার কারন কি?
মোঃ রুবেল হক – সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় গণিত ও ইংরেজি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই বিষয়ে সমানে ফেল করে এবং আগামীতেও করবে চিন্তার কারণ নাই। ইংরেজি ভাল করে আয়ত্ত করতে পারলে শুধু ইহকালেই সারাজীবন উপকারিতা পাওয়া যাবে তা নয় যেকোন জায়গায় সাহস করে দুই চারটা ইংরেজি ঝাড়লে ভালো ক্রেডিটও পাবেন। যত পারা যায় শব্দের অর্থ শিখুন। প্রচুর অনুশীলন করুন। ফ্রি হ্যান্ডরাইটিংয়ের জন্য অনুশীলন অনেক কাজে দেয়। প্রতিদিন একটা টপিক ধরে এক পৃষ্ঠা করে লেখার চর্চা করুন।তাছাড়া বিসিএসে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইংরেজি। এ বিষয়ে ভালো করার মানে প্রতিযোগিতার দৌড়ে অন্য সবার থেকে এগিয়ে যাওয়া। আর খারাপ করলে গড় নম্বর অনেক কমে যাবে। সুতরাং ইংরেজির প্রস্তুতি চাই শক্তভাবে।
বর্তমান সময় – বেশিরভাগ শিক্ষার্থীদের মাঝে ইংরেজি নিয়ে হতাশার ছাপ দেখা যায়, এই সমস্যা হতে বের হবার উপায় কি?
মোঃ রুবেল হক – ইংরেজিতে পণ্ডিত হতেই হবে এমন না। বিসিএস পড়তে এসে যদি বার বার চিন্তা করেন আমি ইংরেজিতে দুর্বল, আমি পারবোনা, তাহলে মানসিকভাবে হেরে যাবেন। আগে জেনে না এসে ভুল করেছি, এটা ভাবার দরকার নেই । নিজেকে কখনো দুর্বল ভাববেন না। কে ভালো ইংরেজি পারে বলেন? যারা ইংরেজিতে পড়াশোনা করেছে তারা, না তারাও ইংরেজিতে দুর্বল। আমি রসায়নে পড়েছি বলে কি, আমি রসায়নে পণ্ডিত? না। হুমায়ূন আহমেদ কেন, এত পরিচিত ও জনপ্রিয় লেখক হল।
একটু চিন্তা করেন, মেধা আপনারও আছে, বারুদ আপানার ভিতরেই আছে, সেটাকে জ্বালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছেন না।
আপনার চারপাশের ভাইরাস দ্বারা আপনি আক্রান্ত। সমস্যার সম্মুখীন হলেও সেটাকে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সমাধানের পথ খুজুন।
কেউ নিয়মিত সংবাদপত্র পড়ে, লেখালেখি করে, আমি আপনি সেটা পড়তেই পারি না। এটা বিশ্বাস করার মত কথা নয়। ইস্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পার করে আসলাম, কত প্রাইভেট পড়লাম, কিন্তু ইংরেজি, ইংরেজি টা আজও ভালো করে পারি কী! তাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেড় মেধাকে শানিত করার চেষ্টা করুন।চেষ্টা চালিয়ে গেলে হতাশা হতে মুক্তি মিলবেই। আপনি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে হেরে যেতে পারেন এটা অসম্ভব কিছু নয় তবে সফল হবার শেষ মুহূর্ত অবধি আপনাকে অনন্তর চেষ্টা করতেই হবে।
বর্তমান সময় – ইংরেজিতে দেখা যায় অনেক গুলো বিষয়ের উত্তর দিতে হয়। কিভাবে শুরু করা উচিত?
মোঃ রুবেল হক – ইংরেজি লেখাগুলো উপন্যাসের মত পড়তে হবে আর সেখানে বেশি বেশি ব্যাকরণ,ভোকাবুলারি এবং বানানের চর্চা করতে হবে। আগ্রহ নিয়ে করলে সেটা আরও কার্যকরী হবে। বাংলা প্রবাদ ও প্রবচনের মত ইডিয়ম এবং ফ্রেজ , প্রবাদ শতাধিক মুখস্ত করে, লিখিত খাতায় সেগুলো প্রয়োগের চেষ্টা করতে হবে। খুব কাজে দিবে আশা করি। যেমন Well and good, safe and soul, part and percel, every nock and corner ইত্যাদি। এক্ষেত্রে রঙিন কালি ব্যবহার করতে পারলে আরও ভাল।
এছাড়া Part of Speech সাধারণ ভাবে এক ধরনের অর্থ আর বাক্যে ভিন্ন ধরনের অর্থ । যেমন Country (দেশ) = noun, কিন্তু in the country = Adverb এর কাজ করে । বাক্যতে কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সেটা বোঝা দরকার । এতে অনুবাদ চর্চা ভাল হয় । ইংরেজি লেখা ও অনুবাদের সময় কোন শব্দ বারবার ব্যবহার করা ঠিক না । বানান এবং ব্যাকরণে ভুল করা যাবেই না। যারা ইংরেজিতে দুর্বল তাদের জন্য পরামর্শ থাকবে- নিয়মিতি চর্চা করেন। বোঝেন আর নাই বোঝেন । প্রতিদিন অনুবাদ ও প্যাসেজ চর্চা করেন। কয়েক পাতা প্রয়োজনে দেখে দেখে লেখেন, আপনার হাতের গতি ও মনের গতি দুটোই বাড়বে ।
বর্তমান সময় – পার্ট ‘এ’ তে প্যাসেজ নিয়ে বেশিরভাগ সময় শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হন। এই ক্ষেত্রে করনীয় কি?
মোঃ রুবেল হক – ইংরেজির ব্যবহার করতে হবে শুদ্ধভাবে, গ্রহণযোগ্যভাবে। প্রথমে নিজের মনে বিশ্বাস রাখুন, ইংরেজি ভাষা অনেক সহজ। আপনি ব্যাকরণ পড়ছেন না বরং একটি ভাষা শিখছেন। তাই বিষয়ভিত্তিক এবং ব্যাকরণগত প্রশ্ন গুলো দ্রুত পড়ে নেন। কোন অজানা ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেলে রুল দিয়ে আন্ডারলাইন করে নিতে হবে । ১ম প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করার জন্যে প্যাসেজ পড়া উচিত। প্যারা আকারে থাকলে প্রতিটা প্যারা পড়ে বামে একটি শব্দ বা একাধিক শব্দ দিয়ে সারমর্ম প্রশ্নে বা খাতায় লিখে নিতে পারেন। এভাবে পাঁচ/ছয়টা শব্দ এবং বিশেষ ক্ষেত্রে একাধিক শব্দ ব্যবহার করে অনুচ্ছেদটি নিজের মত আয়ত্ত করে নেন । এতে ১০/১৫ মিনিট সময় লাগে এবং পুরো অনুচ্ছেদটি আয়ত্তে চলে আসে ।
যেমন-
1. History/Background/
2. Development of process/kinds
3. Utilization
4. Effect / result/impact on civilization and environment
5. Protection/ Recommendation/ conclution
6. Future work should be done.
সব কিছু বিবেচনা করে নিজের মত মনে মনে একটা টাইটেল ঠিক করে ফেলেন । প্যাসেজ আপনাকে কী তথ্য দিচ্ছে সেটা খুব ভাল ভাবে অনুধাবন করার চেষ্টা করেন। মনে মনে প্যাসেজ এর অন্তর্নিহিত অর্থ খুঁজে নেন। সারমর্ম লিখে ফেলেন । Change of Part of Speech, Sentence adjustment এবং বিরামচিহ্ন নিয়মিত চর্চা করেন। এগুলোতে ভুল করা যাবে না।
বর্তমান সময়– ভোকাবুলারি অংশের জন্য শিক্ষার্থীরা বেশ চিন্তিত থাকে, সমাধান কিসে?
মোঃ রুবেল হক – আপনার শব্দভাণ্ডার যত বেশি সমৃদ্ধ হবে, ভাষার প্রতি দখল তত আসবে। অনুবাদ তত ভাল পারবেন। ভোকাবুলারি যেকোন ভাবে পড়া যায়, বাজারের গাইড বই, পত্রিকা রয়েছে অজস্র এছাড়া গুগল, ইউটিউব, উইকিপিডিয়া সহ ইংরেজি দৈনিক পড়তে পারেন। তবে কোন শব্দ নিয়ে পরিষ্কার ধারণা পেতে চাইলে বাংলা একাডেমীর ”ইংরেজি থেকে বাংলা” অভিধান দেখবেন। ব্যক্তিগতভাবে নিষেধ করবো আপনি মোবাইল অভিধান এড়িয়ে চলুন। নতুন শব্দ শেখার মাঝে আনন্দ আছে।
লক্ষ্য রাখবেন, অনুচ্ছেদ এ এমন কিছু থাকে যেটা সংবাদ মাধ্যমের সাহায্য নিয়ে দেশের মানুষকে জানানো দরকার। গণসচেনতা গড়ে তোলা দরকার । সেটাই সম্পাদকের কাছে চিঠি। কয়েক জন মিলে ভাল শব্দ চয়ন করে একটা ফরম্যাট দাঁড় করালে, রুমে প্র্যাকটিস করলে অনেক ভাল নাম্বার আসবে আশা করা যায়। এখানে আপনার চিন্তার কিছুটা বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর এক দারুন সুযোগ। এছাড়া চিঠি লেখা বাম দিকের পাতা থেকে শুরু করলে ভালো হয়।
বর্তমান সময় – রচনা অংশের জন্য বিশেষ কি কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন ?
মোঃ রুবেল হক – রচনাড় ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজি প্রায় একই রকম । দুটি রচনাই কমন আসবে ইনশাল্লাহ । কেবল ভাষা ভিন্ন ।তথ্য, চিত্র, মানচিত্র, ছক, কোটেশন, উক্তি , অর্থনৈতিক সমীক্ষা এমন ভাবে দিবেন যেন আপনার খাতাটা আকর্ষণ করে । কারো এক দেখাতেই হয়ে যায় কারো শত চেষ্টাই বৃথা। গান সবাই গায় কিন্তু গায়ক সবাই নয়। আপনার সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনা ক্যাডার হতে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
বর্তমান সময় – অনুবাদের ক্ষেত্রে কী লিখতে হবে ? কিভাবে লিখবে ?
মোঃ রুবেল হক– আপনার ভাষার গভীরতা কত, তা অনুবাদেই প্রকাশ পায়। আপনি কতটা সাহিত্যমনা, সাহিত্যানুরাগী এটা অনুবাদেই ফুটে ওঠে । অনুবাদ প্রতিদিন চর্চা করতে হয়।বাজারের গাইড বইগুলোর অনুবাদ চর্চা করলেই যথেষ্ট।পরে সময় পেলে ইংরেজি ও বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় অনুবাদ করা যায়। তবে এতটা সময় হাতে পাওয়া কঠিন । বড় বড় জটিল বাক্য অনুবাদ খুব সরল বাংলায় করলে ভাল। অনুবাদ মূলত ভাবানুবাদ। প্রয়োজনে আক্ষরিক অনুবাদ করা যায়। অনুবাদ এখন অনেক বড় আসে তাই সতর্ক থাকবেন পুরোটাই উত্তর করে আসতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে পৃথিবীর সেরা বাক্য টা না বললেও পৃথিবীর সেরা কাজটা হয়ে যায়।
বিসিএস বাংলা পড়াশুনার সময় মাঝে মাঝে মনে মনে চিন্তা করবেন কোন বাংলা শব্দের ইংরেজিটা জানিনা, ঠিক একই ভাবে ইংরেজি পড়ার সময় চিন্তা করবেন কোন ইংরেজি শব্দটার মানে আমি জানিনা। দ্রুত জেনে ফেলেন। সংবাদপত্র, বাংলা সাহিত্য অংশ এবং বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয় পড়ার সময় নতুন কোন বাংলা শব্দ পেলে সেটার ইংরেজি খুঁজার চেষ্টা করবেন।
অনুবাদ ভাল পারবেন, ভোকাবুলারি তে ভাল করবেন।চেষ্টা করুন নির্ভুল ইংরেজি লিখতে। ভুল ও জটিল বাক্য লেখার থেকে ছোট ছোট সরল বাক্য লেখা শ্রেয়। রচনা ও চিঠিতে চেষ্টা করুন তথ্য ও উপাত্ত তুলে ধরতে। অনুবাদ যত বড় হোক, হুবহু অর্থ না লিখে ভাবানুবাদ করুন। শুদ্ধ ও সুন্দরভাবে মূল ভাব তুলে ধরুন। কী লিখবেন সেটা বড় কথা না, কিভাবে লিখবেন সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান সময় – পরিক্ষার্থীদের জন্য কি পরামর্শ থাকবে?
মোঃ রুবেল হক – আপনি প্রথম যে বিসিএস দিচ্ছেন সেটাই তো আপনার শেষ বিসিএস নয় । আপনি প্রিলি যত ভালো প্রিপারেশন নিবেন । লিখিতে তত লাভবান হবেন । প্রিলির ভালো প্রিপারেশন প্রায় ৫০% লিখিত প্রিপারেশন এর মত কাজ করে। আবার যখন লিখিত পড়াশুনা করবেন প্রিলি তখন অনেক সহজ হয়ে যাবে। লিখিত পড়াশুনা টা আগ্রহ নিয়ে পড়লে ভাইভা অনেক ভাল হয়। প্রিপারেশন এমন ভাবে নেওয়া দরকার যেন আপনাকে কাটস মার্কের ময়নাতদন্ত রিপোর্ট নিয়ে দোড়াদোড়ি করতে না হয় । প্রস্তুতি এমনভাবে নেন,যেন বাংলাদেশের জব রিলেটেড সকল পরীক্ষায় নিজের জায়গাটা অটুট থাকে। নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি স্রষ্টার সাথে গভীর সম্পর্ক গরে তুলুন। তিনি নিশ্চয় সবকিছু সহজ করে দিবেন। এভাবেই এগিয়ে যান৷ সফলতা আসবেই৷
বর্তমান সময় – আমাদের সময় দেবার জন্য ধন্যবাদ৷
মোঃ রুবেল হক – বর্তমান সময়ের জন্য শুভকামনা৷