অর্থনীতি ডেস্ক:
চার হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির ভার্চুয়াল সভায় ক্রয় প্রস্তাবগুলোতে অনুমোদন দেওয়া হয়। সভায় কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আজ অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৬তম এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ৩২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য দুটি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১২টি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।’
তিনি বলেন, ‘ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের চারটি, বিদ্যুৎ বিভাগের তিনটি, শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একটি, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একটি, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের একটি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১২টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ৪,৪৬৬ কোটি ৬৮ লাখ ৮৫ হাজার ১২২ টাকা।’
সভায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (কাফকো), বাংলাদেশ-এর কাছ থেকে চতুর্থ লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কাফকোর সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী সারের মূল্য নির্ধারণ করে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার প্রতি মেট্রিক টন ৪২৭.৫০ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট এক কোটি ২৮ লক্ষ ২৫ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১০৯ কোটি ৩৩ লাখ ৩১ হাজার ২৫০ টাকা ব্যয় হবে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কর্তৃক ২০২২ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ৮ম ও ৯ম শ্রেণি, এসএসসি ভোকেশনাল, ইবতেদায়ি (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি), দাখিল (৮ম ও ৯ম শ্রেণি) শ্রেণি এবং দাখিল ভোকেশনাল স্তরের ১০ লক্ষ ৮৬ হাজার ২৪৮ কপি বই দরদাতা প্রতিষ্ঠান (১) সিডনা প্রিন্টিং প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশনস (২টি লট) এবং (২) মৌসুমী অপসেট প্রেস (১টি লট) এর কাছ থেকে এক কোটি ৮১ লাখ ৯৩ হাজার ৩২৩ টাকায় মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের গড় দাম ১৬.৭৪ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘২০২২ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল এবং কারিগরি (ট্রেড) স্তরের (১৮৮টি লট) বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ১৮৮টি লটে মোট ১১ কোটি ১২ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৯৫ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হলে ৬০৫টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৫১২টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ১৮৮টি লটে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহের জন্য মোট ব্যয় হবে ২৩৬ কোটি ২৩ লক্ষ ৯০ হাজার ৮৭৩ টাকা। প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের গড় দাম ২১.২৪ টাকা।’
সভায় বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহের অপর একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। ২০২২ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক স্তরের (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন) ৮ম, ৯ম শ্রেণি, এসএসসি ভোকেশনাল, ইবতেদায়ি (৩য়, ৪র্থ ও ৫ম শ্রেণি), দাখিল (৮ম ও ৯ম শ্রেণি) এবং দাখিল ভোকেশনাল স্তরের ২৪৫টি টেন্ডারে ১০ কোটি ৭২ লক্ষ ৪০ হাজার ২৪৮ কপি বই মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত পুনঃদরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে ৮২১টি দরপত্র জমা পড়ে। তার মধ্যে ৭৭৫টি দরপত্র রেসপনসিভ হয়। টিইসি কর্তৃক ২৪৫টি টেন্ডারে সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বইগুলি সংগ্রহ করতে মোট ৩৫০ কোটি ৬১ লাখ ৯ হাজার ৩৫৫ টাকা ব্যয় হবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের আওতায় ২০তলা বিজ্ঞান ভবন নির্মাণ কাজ ক্রয়ের জন্য উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে মাত্র একটি দরপত্র জমা পড়ে যা রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কন্সট্রাকশন লিমিটেড-এর নাম সুপারিশ করে। এজন্য ব্যয় হবে ১৫৩ কোটি ৬৬ লক্ষ ৭৯ হাজার ৬৪৭ টাকা। কমিটি প্রস্তাবটিতে অনুমোদন দিয়েছে।’
সভায় ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়া-পাকশী-দাশুড়িয়া জাতীয় মহাসড়কের কুষ্টিয়া শহরাংশ চার লেনে উন্নীতকরণসহ অবশিষ্টাংশ যথাযথ মানে উন্নীতকরণ প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউডি-০৫ এর পূর্ত কাজ ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এতে ব্যয় হবে ১৪৭ কোটি ২৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪১৪ টাকা। সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মেসার্স এম.এ, বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড।
আ হ ম মুস্তফা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (২০১৮ সনের সর্বশেষ সংশোধনীসহ)-এর আওতায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে নতুন রোডওয়ে নির্মাণ এবং কয়লা উত্তোলনের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে কর্মরত চীনা কোম্পানি এক্সএমসি-সিএমসি কনসোর্টিয়ামকে চতুর্থ মেয়াদে আরও ছয় বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ১,০৪৯ কোটি ৪৮ লাখ ৭৮ হাজার ৮২ টাকা।’
পরে অতিরিক্ত সচিব বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন, ময়মনসিংহ জোন’ প্রকল্পের প্যাকেজ নং জিডি-১: লট-২ এর আওতায় টার্নকি ভিত্তিতে ছয়টি সাবস্টেশনের যন্ত্রাংশ ও স্থাপন কাজ ক্রয়ের জন্য এক ধাপ দুই খাম পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে ১০টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। তার মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব রেসপনসিভ হয়। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স আইডিয়াল ইলেক্ট্রিক এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড বাংলাদেশ-এর নাম সুপারিশ করে। কমিটি তাতে অনুমোদন দিয়েছে। এজন্য ব্যয় হবে ৬৫ কোটি ৭ লক্ষ ৫৭ হাজার ৪৪৪ টাকা।’
তিনি জানান, খুলনা জেলার তেরখাদা উপজেলায় ৫০ মেগাওয়াট (এসি) ক্ষমতার সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপনের দরপ্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যৌথভাবে হিরো ফিউচার ইঞ্জিনিয়ার্স এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড, সিঙ্গাপুর ও বিজনেস রিচার্স ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন আইএনসি (বিআরআইসি), পানামা। সরকার প্রকল্পটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ কিনবে। প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮.২০ টাকা। ২০ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ১,৩২৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
সভায় শিকলবাহা ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্যাস টারবাইন অ্যান্ড হট গ্যাস পাথ ইন্সপেকশন সংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ ক্রয়, স্থাপন এবং তদসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সেবা ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। প্রকল্পটির জন্য আন্তর্জাতিক উম্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হলে তিনটি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জে অ্যান্ড সি ইমপেক্স লিমিটেড ঢাকা এর নাম সুপারিশ করে। এজন্য ব্যয় হবে ১০২ কোটি ৯৪ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯২ টাকা।
আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে প্যাকেজ-৪ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির একটি প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। আন্তর্জাতিক দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স অ্যাগ্রোকরপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড সিঙ্গাপুরের কাছ থেকে প্রতি মেট্রিক টন ৪২১.১৯ মার্কিন ডলার হিসেবে সর্বমোট দুই কোটি ১০ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭৯ কোটি ৫৩ লক্ষ ২২ হাজার ৩৭৫ টাকা ব্যয় হবে।
সভায় স্পট মার্কেট থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি কেনার একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি’র দাম পড়বে ২৯ দশমিক ৮৯২১ মার্কিন ডলার হিসেবে বাংলাদেশি মুদ্রায় মোট ব্যয় হবে ১০২২ কোটি ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৫৪৬ টাকা। ভিটল এশিয়া প্রাইভেট নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই এলএনজি সরবরাহ করবে।
বিএসডি/আইপি