নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ১৮ ডিসেম্বর। সুপ্রিম কোর্ট দিবস। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা হয় এবং ১৮ ডিসেম্বর আজকের এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। জাতীয়ভাবে কিংবা বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে পালন না করায় অলক্ষ্যেই রয়ে গেছে দিনটি। শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পর ২০১৭ সাল থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এবার পঞ্চমবারের মতো দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি কেন্দ্র করে আজ বিকালে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।
১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্ট গঠনের পর থেকে ৪৮ বছরে (২০২০ সাল পর্যন্ত) সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে (আপিল ও হাই কোর্ট) ১৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৫টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ১১ লাখ ১৯ হাজার ৫৩৭টি। জটের তালিকায় রয়েছে ৪ লাখ ৬৮ হাজার ১৮৮টি। সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ হিসাব তুলে ধরা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের তথ্যানুযায়ী ২০২০ সাল পর্যন্ত আপিল বিভাগে দায়ের হয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ১৪৭টি মামলা। এর বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯২২টি মামলা। এ বিভাগে বিচারাধীন মামলা ১৫ হাজার ২২৫টি মামলা। অন্যদিকে হাই কোর্ট বিভাগে হওয়া মামলার সংখ্যা ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৭৮। বিপরীতে নিষ্পত্তি হয়েছে ৯ লাখ ৯৩ হাজার ৬১৫টি মামলা। এ বিভাগে বিচারাধীন মামলা ৪ লাখ ৫২ হাজার ৯৬৩টি। এসব মামলার বিচারে গতকাল পর্যন্ত উচ্চ আদালতের উভয় বিভাগে দায়িত্ব পালন করছেন ৯৭ জন বিচারপতি। এর মধ্যে আপিল বিভাগে পাঁচজন ও হাই কোর্ট বিভাগে ৯২ জন। তবে তার মধ্যে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ৩০ ডিসেম্বর ও হাই কোর্টের বিচারপতি এ কে এম আবদুল হাকিম আজ অবসরে যাচ্ছেন।
আইনজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংখ্যা অনেক কম। তাই উচ্চ আদালতে মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তিতে আরও অধিকসংখ্যক বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনও নিজের বক্তব্যে বিচারপতি নিয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে বিচারপতির সংখ্যা দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।
উচ্চ আদালতে মামলাজট নিরসনে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও আইন কমিশন চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক ২৭ দফা সুপারিশও দিয়েছিলেন। তাঁর মতে, উচ্চ আদালতে যতসংখ্যক মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে, পাশাপাশি দায়েরের সংখ্যা কমছে না। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে আরও বিচারক নিয়োগের পরামর্শ দেয় আইন কমিশন। ওই সময় উচ্চ আদালতে মামলাজট কমাতে আইন কমিশনের সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি মনিটরিং সেল স্থাপন এবং মামলা দাখিল ও নিষ্পত্তির সংখ্যা কী কী কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিরূপণ। এ ছাড়া কোনো দেওয়ানি, ফৌজদারি মোশন আবেদন বা সিআরপিসির ৫৬১(এ) ধারামতে আবেদন দাখিল করলে বিচারপতিরা প্রথমেই এর মেরিট যাচাই করবেন। মেরিটবিহীন আবেদন করা হলে অবশ্যই সরাসরি খারিজ করবেন।
জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের উচ্চ আদালতে মামলাজট না কমার অন্যতম কারণ বিচারকস্বল্পতা। অন্য দেশে মামলার তুলনায় আমাদের চেয়ে অনেক বেশি বিচারপতি রয়েছেন। তাই মামলাজট কমাতে হলে অবশ্যই আরও অধিকসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট সূত্র জানান, ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত। দিনটি সরকারি ছুটি থাকায় প্রথম আদালত বসে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর। জাতীয়ভাবে কিংবা বিচার বিভাগের পক্ষ থেকে বিশেষভাবে পালন না করায় অলক্ষ্যেই রয়ে গেছে দিনটি। শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠার ৪৫ বছর পর ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্ট দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ওই বছর দিনটি সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন ছুটির মধ্যে হওয়ায় পরের বছর ২ জানুয়ারি দিবসটি পালন করা হয়। কিন্তু এর পর থেকে প্রতি বছর ১৮ ডিসেম্বরই দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের ফুল কোর্ট সভায় বসে বিচারপতিরা সুপ্রিম কোর্টের ছুটিও পুনর্বিন্যাস করেছেন।
সুপ্রিম কোর্টের কর্মসূচি : সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান জানান, আজ বিকাল ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত থাকবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি থাকবেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
বিএসডি / আইপি