মেয়াদহীন পুরোনো ফেরি কেন চালানো হচ্ছে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. তাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ফেরিগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব ক্ল্যাসিফিকেশন সোসাইটিসের তত্ত্বাবধানে নির্মাণ করা। এগুলো মজবুত এবং ৪০ বছরের পরও আর্থিকভাবে লাভজনক।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ফেরি যদি মজবুত থাকে তাহলে তা জরিপ করে এবং ফিটনেস সনদ নিয়েই চালানো উচিত।
দেশে বর্তমানে ছয়টি রুটে ফেরি চলে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার, আরিচা-পাটুরিয়া, আরিচা-কাজীরহাট, চাঁদপুর-শরীয়তপুর, লাহারহাট-ভেদুরিয়া এবং ভোলা-লক্ষ্মীপুর। নৌপরিবহন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় ২৩টি ফেরির ফিটনেস সনদ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এখন ছয়টির ফিটনেস সনদের মেয়াদ আছে। বাকিগুলোর নেই।
পদ্মা সেতুর পিলারে গত ২০ জুলাই রো রো ফেরি শাহ মখদুম ধাক্কা দেয়। বিআইডব্লিউটিসি সূত্র ও নথিপত্র অনুযায়ী, এই ফেরিটি তৈরি হয় ১৯৮৫ সালে। এর হালনাগাদ ফিটনেস সনদ নেই। ২৩ জুলাই পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দেয় রো রো ফেরি শাহজালাল। এই ফেরিটি ১৯৮০ সালে তৈরি। ফলে আইন অনুযায়ী, এর নিবন্ধন মেয়াদের সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে। শাহজালালের হালনাগাদ ফিটনেস সনদও নেই।
* আইন অনুযায়ী নৌযান চলতে পারবে ৪০ বছর। * ৪০ বছরের বেশি বয়সী ফেরি রয়েছে ২০টি, এর মধ্যে ৫টির বয়স ৯৫। * পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা দেওয়া চারটি ফেরির একটিরও ফিটনেস সনদ নেই।
বর্তমানে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে চলছে ফেরি কুঞ্জলতা, বেগম রোকেয়া, বেগম সুফিয়া, ক্যামেলিয়া ও কদম। এগুলোর মধ্যে শুধু ক্যামেলিয়ার হালনাগাদ ফিটনেস সনদ রয়েছে।
নৌযান পরিদর্শন, নিবন্ধন ও ফিটনেস দেখার কাজ করে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। সংস্থাটির মুখ্য পরিদর্শক শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আইন অনুযায়ী কোনো নৌযান ফিটনেস সনদ না নিয়ে বা নিবন্ধন ছাড়া চলাচল করলে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। কিন্তু ফেরির বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে তা করতে হবে সংস্থার প্রধান হিসেবে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিসি যেহেতু একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই তাদের বিরুদ্ধে এত দিন মামলা করা হয়নি। তবে ফিটনেস নিয়ে নৌযান চালাতে সম্প্রতি চিঠি দেওয়া হয়েছে। আবার চিঠি দেওয়া হবে।
৯৫ বছর বয়সী ফেরি
দেশে ১৯২৫ সালে তৈরি পাঁচটি ফেরি এখনো চলছে। এর মধ্যে টেপলো, রায়পুরা, রানীগঞ্জ, রানীখাত ও রামসিরি শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটে পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে চলাচল করত। পিলারে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনার পর এসব ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এই পাঁচটি ফেরিকে ডাম্ব ফেরিও বলা হয়, কারণ এগুলোতে কোনো ইঞ্জিন নেই। পাশে আরেকটি নৌযান (টাগবোট) বেঁধে এগুলোতে যানবাহন পারাপার করা হয়। যমুনা নামের আরেকটি ‘ডাম্ব’ ফেরি (১৯৩৮ সালে তৈরি) শিমুলিয়া-বাংলাবাজার রুটেই চলাচল করত।
পদ্মা সেতুর পিলারে ২৩ জুলাই ফেরির ধাক্কার পর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় একটি চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পুরোনো ডাম্ব ফেরিগুলোকে বাতিল করার (স্ক্র্যাপ) জন্য বলা হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মীর তারিক আলী প্রথম আলোকে বলেন, ফেরিগুলো যাত্রী পারাপার করে। তাই জানমালের নিরাপত্তার জন্যই নিয়ম মানা জরুরি।
বিএসডি/আইপি