লাইফস্টাইল ডেস্ক,
বৈজ্ঞানিক তথ্য-প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও করোনাভাইরাসের টিকার সঙ্গে নারীর সন্তান জন্মদানের ক্ষমতা এবং গর্ভপাত সংক্রান্ত কিছু মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য এখনও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে। গর্ভধারণের সময় নারীকে চিকিৎসা বিষয়ক পরামর্শ দেওয়ার ব্যাপারে ডাক্তাররা চরম সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। এর ফলে আগে তারা গর্ভবতী নারীদেরকে করোনাভাইরাসের টিকা এড়িয়ে চলার কথা বলতেন। কিন্তু এখন এ সংক্রান্ত অনেক তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে ডাক্তারদের দেওয়া আগের পরামর্শ বদলে গেছে। শুধু তাই নয়, গর্ভবতী নারীদের এখন এই টিকা নেওয়ার জন্য আরও বেশি করে উৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ করোনাভাইরাসের কারণেই প্রেগন্যান্সি বা গর্ভধারণ হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
টিকা ডিম্বাশয় বা ওভারিতে জমা হয়– এই মিথ্যা তত্ত্বটি এসেছে জাপানি নিয়ন্ত্রকদের কাছে পেশ করা একটি গবেষণার ভুল ব্যাখ্যা থেকে। এই গবেষণায় ইঁদুরের শরীরে টিকা দেওয়া হয়েছিল এবং একজন মানুষের শরীরে যতটুকু টিকা দেওয়া হয় তারচেয়েও বহু গুণ বেশি ডোজে (১,৩৩৩ গুণ বেশি) টিকা দেওয়া হয়েছিল ইঁদুরের দেহে। দেখা গেছে, ইনজেকশন দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর পুরো ডোজের মাত্র শূন্য দশমিক ১ শতাংশ (এক হাজার ভাগের এক ভাগ) প্রাণীটির ওভারিতে গিয়ে জমা হয়েছে।
একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, টিকা নেওয়া নারীদের মধ্যে গর্ভপাতের হার, সাধারণ সময়ের গর্ভপাতের হারের প্রায় সমান ১২ দশমিক ৫ শতাংশ। লন্ডনে ইম্পেরিয়াল কলেজের বিজ্ঞানী, প্রজনন সংক্রান্ত ইমিউনোলজিস্ট ড. ভিক্টোরিয়া মেইল বলছেন, টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানার জন্য রিপোর্টিং ব্যবস্থা খুব ভালো। এ থেকে বিশেষ বিশেষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানা যায়, যেগুলো হয়তো খুব সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নয়। এক্ষেত্রে কিছু কিছু অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার সঙ্গে রক্তের জমাট বেঁধে যাওয়ার বিশেষ ও বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
টিকা নেওয়া লোকজনের শরীরে আপনি যদি হঠাৎ করে অস্বাভাবিক উপসর্গ দেখতে পান, তখনই সতর্ক হয়ে যাওয়া যায়। তবে এই পদ্ধতি সাধারণ উপসর্গের ওপর নজর রাখার জন্য ততটা উপযুক্ত নয়। এসব উপসর্গের মধ্যে রয়েছে– মাসিক বা পিরিয়ডের ধরনে পরিবর্তন, গর্ভপাত এবং হার্টের সমস্যা।
তথ্যভান্ডারের মধ্যে এসব উপসর্গ দেখলে খুব বেশি সতর্ক হতে হয় না। কারণ এগুলোকে স্বাভাবিক ঘটনা বলেই ধরে নেওয়া হয়। টিকা নিলে কিংবা না নিলেও এ রকম হতে পারে। তবে টিকা না নেওয়া নারীদের চেয়ে টিকা নেওয়া নারীদের মধ্যে যদি অনেক বেশি সংখ্যায় গর্ভপাতের ঘটনা ঘটতে শুরু করে, তখনই এসব তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে অনুসন্ধান শুরু করতে হবে। এখনও পর্যন্ত সে রকম কিছু ঘটেনি।
ব্রিটেনে মাইকেল ইয়েডন নামে একজন বৈজ্ঞানিক গবেষকের একটি পিটিশন সোশ্যাল মিডিয়াতে বহুবার শেয়ার হয়েছে। কোভিড সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর কিছু বক্তব্য দিয়ে তিনি আলোচিত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফাইজার ও মডার্নার টিকায় করোনাভাইরাসের যে স্পাইক প্রোটিন যুক্ত করা হয়েছে তার সঙ্গে প্ল্যাসেন্টার একটি প্রোটিনের মিল রয়েছে। এই প্রোটিনের নাম সিঙ্কিটিন-ওয়ান, প্ল্যাসেন্টা গঠনে যার ভূমিকা রয়েছে।
তার ধারণা, এর ফলে ভাইরাসটি ঠেকাতে যেসব অ্যান্টিবডি তৈরি হবে সেগুলো গর্ভধারণকেও ঠেকিয়ে দিতে পারে। এই ধারণা থেকেই কিছু কিছু বিশেষজ্ঞ বিশ্বাস করেন যে, কোভিড টিকার কারণে নারীর প্রজনন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে; কিন্তু এই ধারণা ভুল। কারণ করোনাভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সঙ্গে প্ল্যাসেন্টার সিঙ্কিটিন-ওয়ান প্রোটিনের কিছুটা মিল রয়েছে বটে, কিন্তু এই দুই প্রোটিনের চরিত্র হুবহু এক নয়। তাদের মধ্যে যে তফাতগুলো আছে তা কখনই শরীরের রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাকে বিভ্রান্ত করবে না। এ বিষয়ে এখন অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য প্রমাণও পাওয়া গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে নারীর প্রজনন ক্ষমতা সংক্রান্ত চিকিৎসক র্যান্ডি মরিস এ বিষয়ে একটি গবেষণা করেছেন। তার কাছে আইভিএফ চিকিৎসা নিতে আসা কিছু নারীর ওপর নজর রাখেন তিনি। দেখার চেষ্টা করেন করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার কারণে তাদের গর্ভধারণের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে কি না। ড. মরিসের গবেষণায় ১৪৩ জন নারী অংশ নিয়েছেন যাতে টিকা নেওয়া, না নেওয়া এবং করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন এমন নারীরাও ছিলেন। দেখা গেছে, তাদের মধ্যে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো তারতম্য ঘটেনি।
বিএসডি/আইপি