সরকারের দুর্নীতির খবর প্রকাশ বন্ধ করতে ধারাবাহিকভাবে সাংবাদিকদের হেনস্তা, হামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে যাতে কেউই লিখতে না পারেন, তাই ভয় পাইয়ে দিতেই সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সঙ্গে এই আচরণ করা হয়েছে। আর ভিন্নমত দমনে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তো আছেই।
বিএনপির নেতারা বলেন, বাংলাদেশে যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নেই তার প্রমাণ সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর হামলা এবং তাকে গ্রেফতার। করোনাকালে তার অনেক অনুসন্ধানী রিপোর্টে সরকারের বিশেষ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনেক বড় বড় দুর্নীতির খবর জনগণ জানতে পেরেছে। এ জন্য তার ওপর সরকারের আক্রোশ রয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারের তো দুর্বলতা ও দুর্নীতির কোনো সীমারেখা নেই। এর মধ্যে সাংবাদিকরা অতি ক্ষুদ্র কিছু অংশ বের করে প্রকাশ করার চেষ্টা করছেন। এই ফ্যাসিবাদী সরকার যা ইচ্ছে তা করবে, কেউ সমালোচনা করতে পারবে না। ফ্যাসিবাদী সরকারের চরিত্র যা তাই বাস্তবায়ন করছে তারা। তারই অংশ হিসেবে সাংবাদিক, সংবাদপত্র ও মালিকদের সরকার এই বার্তাই দিতে চায় যে, তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো দেশ পরিচালনা করবে। কেউ কিছু বললে রোজিনা ইসলামের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সাংবাদিক রোজিনা কোনো অন্যায় করলে আইন অনুযায়ী তার বিচার হতে পারতো। সচিবালয়ের মতো জায়গা থেকে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করতে সর্বোচ্চ আধঘণ্টা লাগতে পারতো। সেখানে তাকে ৫ ঘণ্টা আটকে নির্যাতন করে সরকার বার্তা দিতে চায়, আইন নয় তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ফ্যাসিবাদী কায়দায় শাস্তি দেওয়া হবে। অফিস সিকিউরিটি ও ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এই দুই আইনের উদ্দেশ্য ভিন্নমতকে দমন করা।
সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমি মনে করি, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ওপর এই নির্যাতন স্বাধীন সাংবাদিকতাকে আরও বাধাগ্রস্ত করবে।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গত এক যুগের বেশি সময় ধরে সরকার ভিন্নমত দমনে ফ্যাসিবাদী কায়দায় নির্যাতন চালিয়ে আসছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে প্রায় এক লাখ মামলা দিয়েছে। আগে বিতর্কিত ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের হয়রানি-নির্যাতন করা হয়েছে। অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির হত্যার বিচার এখনও হয়নি।
তিনি আরও বলেন, রোজিনা ইসলামের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বেশ কিছু রিপোর্টে মানুষ জানতে পেরেছে সরকারের দুর্নীতির কথা। এজন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী তাকে আটক রেখে হেনস্তা করা হয়েছে। আর এর মাধ্যমে ভিন্ন মতাবলম্বীদের সরকার বার্তা দিল যে, কেউ তাদের অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বললে একই অবস্থা হবে।
সাংবাদিক দমন-নিপীড়ন বন্ধ করে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও সঠিক তথ্য পাওয়ার অধিকারে সরকারি হস্তক্ষেপ বন্ধের জোর দাবি জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, রোজিনা ইসলামের মতো সাহসী এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকরা যাতে আর সরকারের দুর্নীতি, লুটপাট, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার সংবাদ প্রকাশ না করতে পারে এ ঘটনার মাধ্যমে তাদেরকে ভয় দেখানো হলো।