ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশনস অ্যান্ড ম্যানটেনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম বলেছেন, রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে কোনো ফায়ার সেফটি ছিল না। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো ব্যবস্থাও ছিল না। এছাড়া ফুটপাত ও সড়কে বসা দোকান এবং মানুষের ভিড়ের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হয়েছে। সেখানে পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও ছিল না। তিনি বলেন, মার্কেটটিতে কোনো সেফটি প্ল্যান নেই। এই মার্কেটেও বারবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে, গণসংযোগ করা হয়েছে। সচেতনতা প্রোগ্রাম যেভাবে আমরা করেছি সেভাবে তারা সাড়া দেন নাই। মার্কেটটি কিছুটা বঙ্গবাজারের মতো। এখানে ভেতরে যতগুলো রাস্তা এবং বাইরের যে ছোট ছোট রাস্তা পুরোটাই বিভিন্ন মালামালে গাদাগাদি ছিল। এতে বন্ধ ছিল রাস্তা। পুরো মার্কেট শক্ত কলাপবসিবল গেট দিয়ে আটকানো ছিল। নাইট গার্ডদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি। এ কারণে ভেতরে ফায়ার ফাইটারদের ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা বলেন, মোহাম্মদপুর নতুন বাজারে (কৃষি মার্কেট) আগুন ধরার খবর পেয়ে ৯ মিনিটের মাথায় আমরা সেখানে গিয়েছি। ভোর তিনটা ৫২ মিনিট থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা শুরু করি। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি। ১৭টি ইউনিটের ১৫০ জন ফায়ার ফাইটার কাজ করেছেন। আমাদের সহযোগিতা করেছে বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনী।
তাজুল ইসলাম বলেন, এখানকার নাইট গার্ড যারা ছিলেন তারা বাইরে ছিলেন। তাদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি তেমন একটা। ভেতরে ফায়ার ফাইটারদের ঢুকতে বেগ পেতে হয়েছে। তালা ও কলাপবসিবল গেট ভেঙে ভেতরে গিয়ে তারপর আগুন নির্বাপণের চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, এ মার্কেটের বাইরেও বিভিন্নভাবে রাস্তাগুলো দখল করা ছিল। দোকানের সামনে ছোটখাটো দোকান একটা কালচার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এগুলোর জন্য আমাদের বেগ পেতে হয়। আমরা আসার পরই আগুনের মাত্রা অনেক বেশি দেখেছি। একটা পর্যায়ে মার্কেটের প্রায় চার ভাগের তিনভাগ সম্পূর্ণ আগুন ধরে যায়। আমরা চেষ্টা করি এই মার্কেটের ভেতরে যেন আগুনটা আবদ্ধ থাকে। আমাদের ফায়ার ফাইটাররা সর্বাত্মক চেষ্টা করে আগুনটাকে একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে।
মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে আগুনের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ব্রিফিং
তিনি বলেন, আমরা এখন যেটা করছি আগুনটা নির্বাপণের চেষ্টা চলছে। আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, তবে নির্বাপণে কিছুটা সময় লাগবে।
‘এর আগে আগুন লেগেছে, তখন কি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেননি’- সাংবাদিকদের এই প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রতি সপ্তাহে শনিবার গণসংযোগ করি। এছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কেটের প্রতিনিধিদের ডেকে অনেকবার আলোচনা করেছি, অনেক ওয়ার্কশপ করেছি। মার্কেটের যারা মালিকপক্ষ তাদের ডেকে বুঝিয়েছি সচেতনতা প্রোগ্রাম আমরা কীভাবে করবো। প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিং ওনাদেরই করতে হবে। এই মার্কেটে প্রাথমিক ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো সরঞ্জামই ছিল না। কোনো ধরনের পানির সোর্স ছিল না। পানির সোর্স পেতে আমরা সব চেয়ে বেশি বেগ পেয়েছি । এখানে বিভিন্ন ভবনে পানির সোর্স রয়েছে কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়। খুব দ্রুত আমাদের পানি শেষ হয়ে যায়। আমরা বিশেষ পানিবাহী গাড়ি এনে এবং অন্যান্য বাহিনীর সহায়তায় এই কার্যক্রমগুলো করি।’
আগুন নেভানোর এত সময় লাগার কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগুন নেভানোর আরেকটি বড় কারণ ছিল মানুষের ভিড়। মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশ বিজিবি খুবই হিমশিম খেয়েছে। এই ভিড়ের কারণে আমাদের এত সময় লেগেছে। যদিও মানুষ চেষ্টা করতে চায় আমাদের সহযোগিতা করার জন্য কিন্তু এতে আমাদের অনেক সময় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে।
তিনি বলেন, আগুনের সূত্রপাত আমরা তদন্ত করে দেখার চেষ্টা করব। তবে যতটুকু বুঝেছি মুদির দোকানের যেই অংশটি ছিল ওই অংশ থেকে আগুনের সূত্রপাত। আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে যারা ছিল তাদের দু’একজন কিছুটা আহত হয়েছে। এর বাইরে কোনো বড় ধরনের হতাহতের তথ্য নেই।