আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মহামারি করোনা ভাইরাসের শক্তিশালী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে মোকাবিলায় বিশ্বের উন্নত কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের কোভিড প্রতিরোধী টিকার তৃতীয় ডোজ (বুস্টার ডোজ) প্রয়োগের পরিকল্পনা নিয়েছে। এবার তা স্থগিতের আহ্বান জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
আহ্বানটি জানানোর কারণ হিসেবে সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস দাবি করেন, সম্প্রতি উন্নত দেশগুলোর হাতে নেওয়া কর্মসূচিটি স্থগিত করা হলে বিশ্বের সব দেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে।
এখন পর্যন্ত বিশ্বের অনেক দেশই করোনা টিকার ডোজ পায়নি উল্লেখ করে বুধবার এক বার্তায় ডব্লিউএইচও মহাপরিচালক বলেন, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে নিজ দেশের জনগণকে সুরক্ষা দিতে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সরকার যে উদ্বেগে রয়েছে তা আমি বুঝতে পারি। কিন্তু বিশ্বের যেসব দেশ করোনা টিকার মোট উৎপাদিত ডোজের সিংহভাগ ইতোমধ্যে কিনে ফেলেছে, তারা এই বুস্টার ডোজের জন্য আরও বেশি টিকা কেনা শুরু করছে- এটি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দেশের ষাটোর্ধ ব্যক্তিদের ইতোমধ্যে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছে মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদিবাদী দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েল। মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) জার্মানির সরকার ঘোষণা দিয়েছে, দেশের নাগরিকদের তৃতীয় ডোজ হিসেবে মডার্না এবং ফাইজার টিকার ডোজ দেওয়া হবে। এমনকি যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যে জানিয়েছে, ব্রিটেনের বয়স্ক ও সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকা লাখ লাখ মানুষের শরীরে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বুস্টার ডোজ প্রয়োগ করা হবে।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত মার্কিন জনগণকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকার তৃতীয় ডোজ দেওয়ার প্রসঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো নির্দেশনা দেয়নি। তবে হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে টিকার ডোজ মজুত আছে। তাই নাগরিকদের সুরক্ষায় যে কোনো সময় বুস্টার ডোজ প্রয়োগের কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অনেক দেশেই অপ্রাপ্তবয়স্কদের টিকাদান কর্মসূচিও শুরু হয়েছে।
তবে বিশ্বের অনুন্নত ও দরিদ্র দেশসমূহের চিত্র অবশ্য একেবারেই বিপরীত। ডব্লিউএইচওর পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের অনুন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোতে প্রতি ১০০ জন মানুষের মধ্যে গড়ে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকার ডোজ নিয়েছেন মাত্র ১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ। হাইতি, ডিআর কঙ্গোসহ অনেক দেশের কোনো মানুষ এখন পর্যন্ত টিকার ডোজ নিতে পারেননি।
প্রাণঘাতী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপে এরই মধ্যে করোনার এশীয় উপকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ইন্দোনেশিয়ার মোট জনসংখ্যার কেবল ৭ দশমিক ৯ শতাংশ টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করতে পেরেছেন।
এছাড়া ভ্যাকসিনের ডোজ কিনতে না পারার কারণে এখন পর্যন্ত গণটিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি দেশটি। বা শুরু করলেও সরকার স্থগিতে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বে এমন দেশের সংখ্যা একদমই কম নয় বলে এর আগে একাধিকবার জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
টিকার বণ্টনে সমতা আনতে দরিদ্র ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা দেশসমূহকে ভ্যাকসিনের ডোজ সরবরাহে এর আগে উন্নত বিশ্বকে বেশ কয়েকবার আহ্বান জানিয়েছেন গেব্রিয়েসুস। গত মে মাসে বিভিন্ন দেশে অপ্রাপ্তবয়স্কদের টিকার আওতায় আনার বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছিলেন তিনি।
গত বুধবারের বার্তায় ডব্লিউএইচওর মহাপরিচালক বলেন, আগে বহুবার বলেছি, এখন আবারও বলছি- বিশ্বকে মহামারি করোনামুক্ত করতে চাইলে টিকার বণ্টনে সমতার কোনো বিকল্প নেই। এই বছর শেষ হওয়ার আগে বিশ্বের সব দেশের অন্তত ১০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্য নিয়েছে ডব্লিউএইচও। এ জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক ভ্যাকসিনের ডোজ প্রয়োজন।
আরও পড়ুন – পরীমনির সহযোগী রাজও আটক, মাদক উদ্ধার
তার মতে, উন্নত দেশসমূহকে আবারও আহ্বান জানানো হচ্ছে- তারা যেন তাদের কাছে থাকা অতিরিক্ত টিকার ডোজগুলো কোভ্যাক্সে জমা দেয়। নয়তো বিশ্বে আরও বড় সমস্যা দেখা দিবে।
বিএসডি/এমএম