ডেস্ক রিপোর্ট -
লিওনেল মেসিকে নিয়ে এই আবেগের উষ্ণ স্রোত থাকবেই, এটা শুধু মেসির জন্যই না, পুরো ফুটবল সময়টার জন্য, লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার সেই আশা যেটা ওরা ম্যারাডোনার রাগান্বিত বিদায়ের পর পায়নি, লিওনেল মেসি বার্সেলোনার সেই সম্পদ যা তারা অনেকটাই রত্নভান্ডারে খুঁজে পেয়েছে।
লা মাসিয়ার লিওনেল মেসি, আর যে ক্লাবেই খেলুক না কেন, গত ১৬ বছর সময়কাল কেউই মেসির নাম অগ্রাহ্য করে বার্সেলোনার নাম উচ্চারণ করতে পারবে না। লিওনেল মেসির সাথে বার্সেলোনা বোর্ড কিংবা যেই কর্তাই খারাপ ভালো যাই করুক না কেন, বার্সেলোনার সেই বোর্ড, কর্তা, মানুষ, প্লেয়ার সবাই চলে যাবেন কিন্তু লিওনেল মেসির অবদান থাকবে, স্তম্ভের মতো করে, দম্ভের স্বরূপে।
তবে একই সাথে এই সত্যও মেনে নিতে হবে, ক্লাবের স্বার্থে ক্লাব এবং ফুটবলে দলের ওপরে কোন ব্যক্তি কখনোই না। কিন্তু মোর দ্যান আ ক্লাবের বার্তা দেয়া এই ক্লাবটার কোন একটা জায়গায় গত অন্তত ১২ বছর এই মানুষটা ক্লাবের জন্য ছায়া হিসেবে ছিলেন, সাকিব যেমন বাংলাদেশকে ম্যাচ হারানোর সঙ্গী এবং ম্যাচ জেতানোর নায়ক হিসেবে আছেন, বার্সেলোনাও মেসি ছিলেন এই অর্কেস্ট্রার কাঠি দিয়ে হাত নাড়ানো ব্যক্তি, ২০০৯ থেকে ১৫ এর সাফল্যে, ১৬ থেকে ২১ এর ব্যর্থতায় সমানভাবে লিওনেল ছিলেন জাদুকর। তার জাদুর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল বিমোহিত করে রাখাটা।
এবং তাঁর ব্যর্থতার গল্পের শেষ যে সুতোটা সেটাও কিন্তু মিলেছে সাফল্যেই।
একটা মানুষের জীবন প্রকৃতি দ্বারা কতোটা সুন্দরভাবে চিত্রনাট্যে লিখিত হলে তার গল্পে যখন সে বার্সেলোনার হয়ে শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন, তখন সে পেলেন আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শিরোপা। যেই আর্জেন্টিনায় বার্সেলোনার মেসিকে খুঁজে না পাওয়ার অপরাধে তার জন্য তৈরি থাকতো শব্দের জল্লাদখানা।
লিওনেল মেসি ও বার্সেলোনা একে অন্যের পরিপূরক, তাই তো এখন এই হিমবাহ গলে পড়ছে পৃথিবীজুড়ে।
লিও আমাদের সবার জন্য অনুপ্রেরণা তার হিউম্যান ডেফিসিয়েন্সি নিয়ে হিউম্যান ক্যালিবারের ব্যারিয়ার পার করে দেয়ার কারণে, মানুষ অন্তত মেসিকে দেখে অজুহাত না খোঁজার বাহানা করতে পারে মনের ভেতর, মানুষের সাথে মানুষের যে যুদ্ধটা হয় হৃদয়ের গহীন ভেতর, সেখানে লিওর পক্ষ থেকে উত্তর আসতে পারে যে আপনারাও পারবেন।
লিও একটা ক্লাবে না খেলে দশটা ক্লাবে খেললেও হয়তো একই রেকর্ড আর ট্রফির সাজানো মঞ্চ পেছনে রেখে ছবিটা তুলতে পারতেন, কিন্তু ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ভক্ত হিসেবে আমি জানি একই ক্লাবের হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়ার অর্থটা, আমাদের গিগস, স্কোলস, নেভিলরা ছিলেন, তাদের এখনো একইভাবে ভালোবাসি আমরা।
মেসি বার্সেলোনাকে নাকি বার্সেলোনা মেসিকে ছাড়লো এই প্রশ্নের উত্তর অন্য কোন সময়ের জন্য তোলা থাক।
আপাতত আমি এই মুহূর্তটাকে ধরে রাখি এবং বলতেই পারি, পৃথিবীতে চরম আর পরম বলতে কিছু নাই, এই বোধটা মানুষকে আরো বড় মঞ্চে আরো বিস্তৃত মনে ভাবার শক্তি জোগায়।
আজ তাই তার মানব সামর্থ্য ছাড়িয়ে যাওয়ার গল্পটাই বলি, মানব সৃষ্ট কথার ভাষায় অনেক অসাধ্যকেই সাধন তো করেছেন মেসি, সেই গল্পটা লেখা থাক হাসিমুখে, কান্নাটা ক্ষণস্থায়ী, হাসিমুখ থাকছে।
বিএসডি/এমএম