নিজস্ব প্রতিবেদক,
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি করায় বিপাকে পড়েছেন ঢাকাসহ আশপাশ থেকে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র বলছে, হাসপাতালটিকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করায় এখানে আন্তঃবিভাগের সব রোগীকে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে। এখন শুধুমাত্র করোনা রোগী ছাড়া অন্য কোনো রোগী ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। যার ফলে চরম দুর্ভোগ ও বিভ্রান্তিতে পড়ছে রাজধানী ও এর আশপাশ থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শতশত রোগী। ভর্তি না হয়ে ফিরতে হচ্ছে তাদের।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল লিখিতভাবে কোনো অনুমতি পায়নি। তবে মৌখিক নির্দেশনাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে একাধিক ভুক্তভোগী রোগী জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মহাখালী করোনা হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালসহ প্রায় অধিকাংশ হাসপাতালকেই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি প্রায় সব হাসপাতালই করোনা রোগী ভর্তি নিচ্ছে। সেক্ষেত্রে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগীদের জন্য চিকিৎসাসেবা নেয়ার একটি উত্তম জায়গা ছিলো কিন্তু এটাও করোনা হাসপাতাল হওয়াতে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা পেতে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
এমনই একজন ভুক্তভোগী শেরপুর সদরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আতিক হাসান। গত ৩ আগস্ট দুপুর দুইটার দিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বারান্দায় স্ট্রোক করা অচেতন স্ত্রী নুরজাহানকে নিয়ে ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছিলেন কিন্তু এ হাসপাতালে ভর্তি করা হবে না জানিয়ে দেওয়ায় অচেতন স্ত্রীকে নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি।
আতিক হাসান জানান, সকাল ১০টার দিকে স্ট্রোক করার পর স্ত্রীকে শেরপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখান থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয় কিন্তু রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তারা রাজধানীর নিউরো সাইন্স মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ৪ আগস্ট নিউরো সাইন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসক দেখানোর পর শয্যা খালি না থাকায় তারা অন্য হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে কিছু টেস্ট দিয়ে রিপোর্ট দেখাতে বলেন। পরে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল যোগাযোগ করা হলে তারাও ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়। এখন এ মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে কোথায় যাব কিছু ভেবে পাচ্ছি না।
জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে সুপারভাইজার ও কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুল মান্নান বিশ্বাস বলেন, এখানে আউটডোরে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। করোনা ব্যতীত অন্য রোগীদের ভর্তি নিষেধ আছে। ভর্তির প্রয়োজন হলে শুধু করোনা রোগীদের ভর্তি করা হচ্ছে। অন্য রোগীদের বিভিন্ন হাসপাতালে রেফার্ড করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা হাসপাতালে অন্য রোগী ভর্তি করা হলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকির থাকবে। যেটা সাধারণ রোগীদের জন্য খুবই ভয়াবহ হবে। এখন আন্তঃবিভাগে করোনা রোগী ছাড়া অন্য কোনো রোগী নেই। দু’একজন যারা ছিল তারা ডেঙ্গু রোগী। তারাও করোনায় সংক্রমিত হয়ে গেছেন। এমন অবস্থায় আমরা ঝুঁকি নিতে পারি না।
করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল হিসেবে অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক খলিলুর রহমান জানান, আমাদের এটা ক্লিনিক নয়, যে চিঠির আশায় বসে থাকতে হবে। আমরা মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছি তাই আপাতত করোনা হাসপাতাল হিসেবে রোগী ভর্তি নিচ্ছি। সব হাসপাতালেই মৌখিক অনুমোদনের ভিত্তিতেই রোগী ভর্তি করছে।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালকে করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রূপান্তর করা হলে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিতে কোনো দুর্ভোগের শিকার হতে পারে কিনা জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, সাধারণ রোগীদের অবশ্যই অসুবিধা হচ্ছে। সারাদেশেই অসুবিধা হচ্ছে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে লালকুঠি হাসপাতালে ২৫০টি শয্যা আছে। নন-কোভিড রোগীদের আউটডোর থেকে সেখানে যাতে রেফার করা হয়। তাদের ডাক্তাররাই ওখানে সার্ভিস দেবে। এভাবেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএসডি/আইপি