নিজস্ব প্রতিবেদক,
বিশ্বজুড়ে রীতিমতো তাণ্ডব চালানো মহামারি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ধাপে ধাপে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার পরিকল্পনা করছে সরকার। এ ক্ষেত্রে প্রথমেই অগ্রাধিকার পাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং চলতি বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আনার বিষয়গুলো। এরপর পর্যায়ক্রমে মাধ্যমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে চলতি বছরের প্রাথমিক সমাপনী ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই ছুটি শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিতে চায় সরকার। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
এর আগে দুইবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার কথা জানালেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় তা আর সম্ভব হয়নি। তবে এবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে আগাম কোনো ঘোষণা আসছে না। যতদূর সম্ভব শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তাদের ভ্যাকসিনের আওতায় এনে তবেই ঘোষণা আসতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সব পরিকল্পনাই নির্ভর করছে আগামী এক মাসে কত সংখ্যক শিক্ষার্থীকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায় তার ওপর। এরমধ্যে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় তাদের ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় তাদের বিকল্প পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তাব করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ ক্ষেত্রে তাদের রেজিস্ট্রেশন বা ফরম পূরণের ডকুমেন্ট দিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া যায় কিনা সেটিও ভাবছে সরকার। এ নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ দিকে, আগামী বুধবার (১১ আগস্ট) থেকে বিধিনিষেধ শিথিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। এ দিন থেকে সবকিছু ফের স্বাভাবিক হচ্ছে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে প্রজ্ঞাপনে কোনো নির্দেশনা দেয়নি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এরই মধ্যে সোমবার (৯ আগস্ট) মন্ত্রিপরিষদ সচিব গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে নির্দেশনা নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
ধাপে ধাপে খুলবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চলতি শিক্ষাবর্ষ প্রায় শেষ। সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হলেও অর্ধবার্ষিক, বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। তাই এবার প্রাথমিক, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা হচ্ছে না। সরকারের পলিসি হলো, সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসাথে না খুলে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর খুলে আটকে থাকা স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের চূড়ান্ত পরীক্ষাগুলো আগে নেওয়া হবে। এরপর ধাপে ধাপে কলেজ ও বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়ার ওপর।
এ দিকে, সম্প্রতি শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইরাবের একটি অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘১৭ মাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে পিছু হটতে হয়েছে। করোনার এখন যে সংক্রমণ চলছে সেটা কমে আসলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা স্কুলগুলো খুলে দিতে চাই। সরাসরি ক্লাস শুরু করা খুব দরকার। স্কুল খুলে দেওয়ার পূর্ণ প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদারকিতে প্রাথমিক শিক্ষকরা বেশিরভাগই কোভিড-১৯ এর টিকা নিয়েছেন।’
অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি চিঠি দিয়ে প্রতি দুই দিন অন্তর বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয় ক্যাম্পাস, ক্লাসরুম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তারা সেটি করছেন। ভ্যাকসিন কার্যক্রমও জোরেশোরে চলছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খোলা হবে তা আগাম বলতে চাই না। পরিস্থিতি যখনই অনুকূলে আসবে তখনই ঘোষণা দেওয়া হবে।
আর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকার কার্যক্রম দ্রুত চলছে। আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শেষ করার পর অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টিতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শেষ হলেই অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া শুরু হবে। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের যারা প্রথম বা দ্বিতীয় বর্ষে পড়েন, তাদের অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। তাই তাদের স্টুডেন্ট আইডি কার্ড নম্বরের মাধ্যমে টিকা দেওয়া যায় কিনা, সে ব্যাপারেও আলাপ-আলোচনা করছি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন অফিসে বিশেষ হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে। তারা সেখানে গিয়ে এক ঘণ্টার মধ্যে এনআইডি কার্ড নিতে পারবেন বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’
বিএসডি/আইপি