নিজস্ব প্রতিবেদক,
মা-বাবার সঙ্গেই থাকতো ৬ বছরের শিশু সজিব। ঢাকা শহরের কোনো এক মাজারের পাশে। গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জ। বাবার নাম বাবুল। মা চম্পা।
ব্যাস নিজের পরিচয়ে শুধু এটুকুই বলতে পারছে ৬ বছরের অবুঝ এই শিশু। বাবা-মার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে সজিব ১২ দিন আগে। খোঁজ মিলছে না সজিবের মা-বাবার। সূত্রাপুর থানা-তেজগাঁও ভিকটিম সেন্টার, আনোয়ারা শিশুপল্লী সেন্টার ঘুরে তার ঠিকানা এখন মিরপুরের শিশু আশ্রয়ন কেন্দ্রে। সজিব প্রায় সময়ে মা-বাবার জন্য কান্নাকাটি করছে।
গত ২৯ জুলাই ভোরে সূত্রাপুর থানাধীন মুসলিম হোটেলের সামনে শিশু সজিবকে একা দেখতে পেয়ে সাকিব নামে এক পথচারী তাকে থানায় দিয়ে আসে। সূত্রাপুর থানা পুলিশ নানা জায়গায় সন্ধান করেও তার স্বজনদের খুঁজে পায়নি। সজিবও নিজের পুরো ঠিকানা বলতে পারছে না।
স্বজনদের খুঁজে না পাওয়ায় তেজগাঁও ভিকটিম সেন্টার, আনোয়ারা শিশুপল্লী সেন্টার সজিবকে আর রাখতে চাইনি।
এজন্য সোমবার (৯ আগষ্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলামের আদালতে হাজির করে সরকারি যে কোনো আশ্রয় কেন্দ্রে তাকে রাখার আবেদন করেন সূত্রাপুর থানার এসআই (নি.) রমজান হোসেন। আদালত তাকে মিরপুর-১ এর সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় পরিচালিত শিশু আশ্রয়ন কেন্দ্রে রাখার আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, যেহেতু শিশুটির কোনো আইনত অভিভাবককে খুঁজে পাওয়া যায় নাই, সেহেতু তাকে মিরপুর-১ এর সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রনালয় পরিচালিত শিশু আশ্রয়ন কেন্দ্রে প্রতিপালনের নির্দেশ দেয়া হলো। উপযুক্ত প্রমানের ভিত্তিতে তার কোনো আইনানুগ অভিভাবক পাওয়া গেলে তার পূর্নাঙ্গ নাম ঠিকানাসহ ভোটার আইডি যাচাই ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যায়ন রেখে দাবিদার অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করা যেতে পারে।
গত ২৯ জুলাই ভোর চারটার দিকে সূত্রাপুর থানাধীন মুসলিম হোটেলের সামনে শিশু সজিবকে দেখতে পেয়ে সাকিব নামে এক পথচারী তাকে থানায় নিয়ে আসেন। পরে সজিবের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় অনেক খোঁজখুঁজি করেও তার কোনো আত্মীয়-স্বজনকে পায়নি পুলিশ। ওইদিন তাকে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে সজীবকে অন্যত্র নেয়ার জন্য পুলিশকে বলা হয়।
পরবর্তীতে ৪ আগস্ট ঢাকার দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের বেসরকারি সংস্থা ইসাবেলা আনোয়ারা শিশুপল্লী সেন্টার, পথশিশু আশ্রয়কেন্দ্র সদরঘাট স্যোশাল সার্ভিস সেন্টারে তাকে রাখা হয়। প্রকৃত অভিভাবক বা আত্মীয়-স্বজন খুঁজে না পাওয়ায় সজীবকে রাখার আগ্রহ নেই এ সংস্থার। পরে পুলিশ তাকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার জন্য আদালতে হাজির করে। আদালত তাকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর আদেশ দেন।
সূত্রাপুর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা খোরশেদ আলম জানান,‘শিশুটি নিজের নাম, বাবা আর মায়ের নাম আর বাড়ি মানিকগঞ্জ ছাড়া আর কিছুই জানাতে পারছে না। ঢাকায় বাসা কোথায় তাও বলতে পারে না। শুধু বলে ঢাকায় কোনো এক মাজারের পাশে তারা থাকে। এদিন সূত্রাপুর থানা পুলিশ তাকে সরকারি আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।’
বিএসডি/আইপি