আন্তর্জাতিক ডেস্ক
মার্কিন সেনাবাহিনীসহ সকল বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার প্রক্রিয়ার মাঝেই আফগানিস্তানজুড়ে সরকারি বাহিনী ও তালিবান যোদ্ধাদের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকার দখল নিচ্ছে সশস্ত্র বিদ্রোহী তালিবান। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে আফগান সেনাপ্রধানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে কাবুল সরকার।
বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যটি নিশ্চিত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি নিউজ। সেখানে বলা হয়, আফগানিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মাদ আহমাদজাইকে তার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে তাৎক্ষণিক সেই পদে জেনারেল হায়বাতুল্লাহ আলীজাইকে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। জেনারেল আলীজাই এতদিন আফগান বিশেষ বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গুরুত্বপূর্ণ সেই পদে এখন আফগান সেনাবাহিনীর ২১৫ ডিভিশনের কমান্ডার সামি সাদাতকে নিয়োগ দেওয়া হলো।
অন্য দিকে সদ্য দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাওয়া জেনারেল ওয়ালি মোহাম্মাদ আহমাদজাইকে মাত্র দুমাস আগেই অর্থাৎ গেল জুন মাসে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি। তালিবানের সশস্ত্র যোদ্ধারা আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর দেশের নিরাপত্তা ইস্যুতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়। মূলত এর পরপরই জেনারেল আহমাদজাইকে তার পদ সরিয়ে দেওয়া হলো।
এ দিকে সশস্ত্র বিদ্রোহী সংগঠন তালিবানের হাতে একের পর প্রাদেশিক রাজধানী পতনের মাঝেই দেশটির ভারপ্রাপ্ত অর্থমন্ত্রী খালিদ পায়েনদা পদত্যাগ করে আফগানিস্তান ছেড়ে চলে গেছেন। বুধবার (১১ আগস্ট) আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রাফি বলেন, অর্থমন্ত্রী পেয়ানদা এরই মধ্যে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। কারণ তালিবান কাস্টমস (শুল্ক) পোস্টগুলো দখল করায় আফগানিস্তানের রাজস্ব আদায় ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে।
এছাড়া আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার আফগানিস্তানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বাদাখশান প্রদেশের রাজধানী ফয়জাবাদ নিজেদের দখলে নিয়েছে তালিবান। গোষ্ঠীটি এ নিয়ে গেল ছয় দিনে মোট নয়টি প্রাদেশিক রাজধানী দখল করল।
স্থানীয় আইনপ্রণেতা জাবিউল্লাহ আতিক ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘টানা কয়েক দিন ধরে চলা লড়াই ও সংঘর্ষের পর বুধবার তালিবান যোদ্ধারা সরকারি বাহিনীকে পিছু হটাতে বাধ্য করেছে। ফলে গোটা শহর এখন তালিবান যোদ্ধাদের দখলে চলে গেছে।
গোষ্ঠীটির দাবি, তালিবান যোদ্ধারা এরই মধ্যে আফগানিস্তানের নিমরোজ প্রদেশের রাজধানী জারাঞ্জ, কুন্দুজের রাজধানী কুন্দুজ, তাখারের রাজধানী তালোকান, সামানগানের রাজধানী আইবাক, সার-ই-পলের রাজধানী সার-ই-পাল, জাওজান রাজধানী শেবেরগানের এবং বাদাখশানের ফয়জাবাদ শহর দখল করে নিয়েছে।
সশস্ত্র সংগঠনটির যোদ্ধারা খুব দ্রুতগতিতে আফগানিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের দখল নিয়ে নিচ্ছে। গ্রামীণ এলাকাগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের পর এখন বড় বড় শহর ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলো দখল করে নিচ্ছে তালিবান। এতে করে দেশটি মারাত্মকভাবে নিরাপত্তাজনিত হুমকির মুখে পড়েছে।
বিএসডি/এমএম