মাটির নিচে রহসম্যয় শহর কুবার পেডি”। ছবি সংগৃহীত
লাইফস্টাইল ডেস্ক,
অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ মরু এলাকায় লুকিয়ে আছে কুবার পেডি নামের ভূগর্ভস্থ অত্যাধুনিক একটি শহর। ওপাল পাথরের জন্য বিখ্যাত এই শহরটির ৮০ ভাগ মানুষই বসবাস করেন ভূগর্ভে। বিশ্বের ৯৫ শতাংশ ওপাল পাওয়া যায় কুবার পেডি থেকে। যা আজ পর্যন্ত অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল। জনমানবশূন্য কুবার পেডির চারদিকে শুধু ধু ধু লাল বালি আর গুহা। গুহার ভেতর সুড়ঙ্গ বেয়ে নেমে গেছে সিঁড়ি। যা ধরে নামলেই রূপকথা।
সেখানে বসতি ছাড়াও আছে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত রেস্তোরাঁ, বইয়ের দোকান, গির্জা, বিনোদন কেন্দ্র, ক্লাব, ব্যাংক, আর্ট গ্যালারি, মার্কেট কমপ্লেক্স এমনকি সুইমিংপুলও। সঙ্গে বিশ্বের সব খবরাখবর জানতে এবং যোগাযোগের জন্য আছে ২৪ ঘন্টা ওয়াইফাই ইন্টারনেট সুবিধা। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত একটি ছোট শহর। ছোট এই নগরীতে থাকেন আদিবাসীসহ ৪৫টি দেশের প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। শহরটি গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে এক রোমাঞ্চকর ঘটনা।
১৯১৪ সালে উইল হাচিসন নামে ১৪ বছরের একটি ছেলে, তার বাবা এবং বাবার সঙ্গীদের সঙ্গে এসেছিল সোনার খনির খোঁজে। তাবু করে ছিলেন অ্যাডিলেড থেকে ৫০০ মাইল উত্তরে। উইল হাচিসন বাবা তাকে বারবার বলেছিলেন যেন সে তাবুর বাইরে না যায়। তবে একঘেয়েমি কাটাতে বাবার আদেশ অমান্য করে একাই ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন উইল হাচিসন। তারপর কার্ড ভর্তি বহু মূল্যবান ওলাপ পাথরের বোঝা নিয়ে ফিরে আসেন মাঝরাতে।
এই খনি আবিষ্কারের পর থেকে শুরু হয় রত্ন আহরণকারীদের আনাগোনা। মাইনারদের খোঁড়াখুঁড়ি দেখে কুবার পেডি বা সাদা মানুষের গর্ত নাম দেন স্থানীয় অধিবাসীরা। মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে ছোট ছোট গর্ত মিলে সৃষ্টি করে বিশাল গুহা। মরুর ধূলিঝড় আর দিনের বেলা প্রচণ্ড উত্তাপ আর রাতে কনকনে বরফ শীতল ঠাণ্ডা থেকে বাঁচতে গুহায় থাকতে শুরু করেন ওপাল সন্ধানীরা। কালের বিবর্তনে ভূগর্ভে গড়ে তুলেন আস্ত একটি নাগরী, যা আজ বিশ্বের বিস্ময়।
শহরটিতে থাকা মানুষদের বাসায় যদি নতুন রুম বা বুকশেলফের দরকার পড়ে, তবে গুহার পাথরের খুঁড়ে খুড়েই তৈরি হয় সেগুলো। বলা হয়ে থাকে অস্ট্রেলিয়ার সব জায়গা যদি বিদ্যুৎহীন হয়ে পরে, কুবার পেডিতে তখনো দেখা যাবে বিদ্যুতের আলো। কারণ এই ভূগর্ভস্থ শহরে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য রয়েছে বিশাল সোলার প্যানেলের ব্যবস্থা। এছাড়াও রিসাইকেল পদ্ধতির মাধ্যমে পূরণ করা হয় পানির চাহিদা।
লাল বালিতে পূর্ণ ও গাছপালাহীন ধু ধু মরুভূমির এই শহরের আবহাওয়া বড়ই অদ্ভুত। গরমকালে বালির উপরে তাপমাত্রা থাকে প্রায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও বেশি। তবে একই সময় বালির নিচে বা ভূগর্ভস্থ শহরটির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। জানালাবিহীন ভূগর্ভস্থ শহরটিতে থাকে স্বাভাবিক তাপমাত্রা। যার কারণে জানালা না থাকা কিংবা বালির উপর অত্যধিক তাপমাত্রার এতে প্রভাব ফেলে না।
তাছাড়া শহরের অন্যান্য আকর্ষনীয় বৈশিষ্ট্য আকৃষ্ট করেছে চলচ্চিত্র নির্মাতাদেরকেও। ২০০৬ সালে এই শহরকে নিয়েই তৈরি হয় ওপল ড্রিম নামে একটি চলচ্চিত্র। প্রতিবছর ভূগর্ভস্থ শহরের বাসিন্দারা গ্রীষ্মের শেষে আয়োজন করে বিশেষ উৎসব। এই উৎসবে সবচেয়ে আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানের নাম ওপাল। এই আধুনিক বিশ্বের ট্রাফিক জ্যাম, অসম্ভব গরম, ব্যস্ততার হাসপাস এরকম হাজারো অস্বস্তি থেকে বাঁচতে যে কেউ ঘুরে আসতে পারেন অস্ট্রেলিয়ার কুবার পেডি শহর থেকে।
বিএসডি/আইপি