ডা. ইসমাইল আজহারি
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে বার বার ভ্রমণ কিংবা চলাচলে আরও বাধানিষেধ আরোপ করেছে সরকার ও প্রশাসন ।
আমরা জানি আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সংস্পর্শে এলে বা তার সঙ্গে হাত মেলালেও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারে যে কেউ। এটাকে বলা হয় এক ধরনের ড্রপলেট ইনফেকশন। তাই এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে প্রথমেই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ভ্যাক্সিন দেয়া থাকলেও মাক্স ব্যবহার বাধ্যতামূলক। শুরুতে বিভিন্ন দেশে মাস্ক ব্যবহারে শিথিলতা আসলেও ভ্যাক্সিন গ্রহনের পরেও আক্রান্ত হার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় মাস্ক পরিধানের বাধ্যবাধকতা নতুন করে আরো বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে অনেকেই ফেস-মাস্ক ব্যবহার করছেন। কিন্তু অনেকেই মাস্ক পরছেন ভুল পদ্ধতিতে।
সাধারণত যে মাস্ক প্রতিনিয়ত সবাই ব্যবহার করছেন সেটি সার্জিক্যাল মাস্ক। এই মাস্ক সুস্থ আর অসুস্থতার ক্ষেত্রে ব্যবহারবিধি ভিন্ন। সার্জিক্যাল মাস্ক এর সামনে নীল আর পেছনে সাদা রংয়ের থাকে। সুস্থ থাকলে শুধু দূষণ থেকে রক্ষার জন্য মাস্কটির সাদা রংয়ের অংশটি সামনে রেখে পরতে হবে এবং অসুস্থ হলে মানে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি হলে নীল রংয়ের রেয়ার দেয়া অংশটি সামনে রেখে মাস্ক পরতে হবে।এটা সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি।
চাইলে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে সুতি কাপড় তিন বা দুই স্তরের হলে ভাল হয়। অথবা যে কোন কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে নীচে সার্জিক্যাল মাস্ক পড়ে নেয়া উত্তম। এটি আপনাকে আরো বেশি সুরক্ষা দিতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে মাস্ক ঠিক মত আপনার মুখে লেগে আছে কিনা এবং কোথাও যেন ফাকা যায়গা না থাকে। বাজারে আজ কাল বিভিন্ন ডিজাউনের কাপড়ের মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে সেসব ব্যবহারে সতর্ক থাকা কাম্য। প্রয়োজনে সেসব মাস্ক ব্যবহার করতে চাইলে এর নীচে একটি সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়ে নিতে হবে। সার্জিক্যাল মাস্ক কখনোই কাপড়ের মাস্কের উপরে পড়া উচিত নয়। একসাথে দুটি সার্জিক্যাল মাস্ক পড়া যেতে পারে তবে উত্তম হলো ভাল মানের তিন স্তর বিশিষ্ট একটি সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা।
মনে রাখতে হবে এসব মাস্ক একবারের বেশি অতিরিক্ত ব্যবহারের সুযোগ নেই। একই মাস্ক একাধিকবার ব্যবহার করলে সংক্রমণ এর ঝুকি বাড়ে। কাপড়ের মাস্ক ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যেতে পারে সেক্ষেত্রে অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুতে হবে সতর্কতার সাথে। সার্জিক্যাল মাস্ক ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে না।
বাচ্চাদের জন্য বাজারে ছোট সাইজের মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে সেসব চাইলে ব্যবহার করা যায় তবে উপরোক্ত সতর্কতা নিতে হবে। অনিরাপদ মাস্ক ব্যবহারে কোন সুফল নেই। মাস্কের সামনে কিংবা পিছনের অংশে হাতের স্পর্শ যেন না লাগে সেক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে।
মনে রাখতে হবে বাইরে বের হলে কিংবা কারো সাথে কথা বলার সময় অবশ্যই মাস্ক সঠিকভাবে পরিধান করতে হবে। হাত সাবান দিয়ে ধুতে হবে নিয়মিত এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই ভ্যাক্সিন নিতে হবে। সঠিক নিয়মে মাস্ক পড়ুন,ভ্যাক্সিন নিন, সুস্থ ও নিরাপদ থাকুন। অন্যদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে উৎসাহ দিন।
লেখকঃ ডা. ইসমাইল আজহারি
মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সিইও, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স এন্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ