নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ কিংবদন্তী চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেনের জন্মদিন। তিনি একজন খ্যাতিমান বাংলাদেশি সাহিত্যিক, অভিনেতা এবং চলচ্চিত্রকার। একজন সফল চিত্রনাট্যকার, অভিনয় এবং পরিচালনা– প্রত্যেক ক্ষেত্রেই তিনি সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন।
চলচ্চিত্রের কাহীনি রচনা থেকে চিত্রনাট্য, গীতিকার, প্রায় সব কিছুতেই এতোটাই সিদ্ধহস্ত ছিলেন যে তার চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের বিশেষণে লিখা হতো” একটি আমজাদ হোসেন চলচ্চিত্র “।
বাংলাদেশে উনি কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার চরিত্ররূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন ঢালিউড চলচ্চিত্র সম্রাজ্যে।
আমজাদ হোসেনের জন্ম ১৯৪২ সালের ১৪ই আগস্ট জামালপুরে। ছেলেবেলা থেকেই তিনি লেখালেখির সঙ্গে জড়িত হন। ভারতের দেশ পত্রিকায় তার লেখা কবিতা ছাপা হয়। পঞ্চাশের দশকে আমজাদ হোসেন পুরোদমে সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। সাহিত্য রচনার পাশাপাশি ঢাকায় মঞ্চনাটকে অভিনয় শুরু করেন আমজাদ হোসেন।
১৯৬১ সালে ‘তোমার আমার’ চলচ্চিত্রে দিয়ে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন এবং একই বছর ‘হারানো দিন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ১৯৬৩ সালে তার লেখা নাটক অবলম্বনে পরিচালক সালাহউদ্দিন নির্মাণ করেন ‘ধারাপাত’ চলচ্চিত্র। এটি তার রচিত প্রথম চলচ্চিত্র এবং এতে তিনি একটি প্রধান চরিত্রে অভিনয়ও করেন। এই সময়ে তিনি নন্দিত পরিচালক জহির রায়হানের সহকারী হিসেবে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেন। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘বেহুলা’ ও দুইভাই, ‘আনোয়ারা’। ১৯৬৭ সালে তিনি নুরুল হক বাচ্চুর সঙ্গে যৌথভাবে নির্মাণ করেন ‘আগুন নিয়ে খেলা’। এ সিনেমায়ও তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবিটি বক্স অফিস হিট করে।
একক পরিচালক হিসেবে তিনি ১৯৬৭ সালে আত্মপ্রকাশ করেন ‘জুলেখা’ ছবি দিয়ে। এরপর তিনি নুরুল হক বাচ্চু, রহিম নওয়াজ ও মুস্তফা মেহমুদের সঙ্গে যৌথভাবে ‘দুই ভাই’ এবং এককভাবে ‘বাল্যবন্ধু’ ও ‘পিতা পুত্র’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।
ঢাকাই চলচ্চিত্রে একটা সময় নিজস্ব ধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করেন ” একটি আমজাদ চলচ্চিত্র ” নামে। নয়ন মনি থেকে শুরু করে সুন্দরি, কসাই সহ অনেক গুলো চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। যা ঢাকাই চলচ্চিত্র ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। বাণিজ্যিক ভাবে প্রত্যেকটি ছবি সুপার ডুপার হিট করে বক্স অফিস সাফল্য এনে দেয়। এমনকি তার সবগুলো ছবির গান হিট করে দর্শক ও শ্রোতাদের মুখে মুখে ফেরে।
আমজাদ হোসেন চলচ্চিত্রের পাশাপাশি বেশ কিছু টিভি নাটকেও যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। জব্বার আলীর ঈদ” নামে প্রতি ঈদে উনার নাটকের জন্য কোটি কোটি দর্শক মুখিয়ে থাকতো।
আমজাদ হোসেন ইশকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উচ্চ চিকিৎসার জন্য সরকারী অনুদানে দেশের বাইরে পাঠানো হয়। ২০১৮ সালে ১৪ই ডিসেম্বর ৭৬ বছর বয়সে ব্যাংককে মৃত্যুবরণ করেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের অন্যতম কিংবদন্তি আমজাদ হোসেন।
বিএসডি/এমএম