আন্তর্জাতিক ডেস্ক
এশিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার অন্যতম রাস্তা ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের আকাশপথ ধরে ইউরোপের সীমান্তে ঢোকা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বহু বিমান সংস্থাই আফগানিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করতে চাইছে না। কোনো কোনো দেশ ইতোমধ্যেই তাদের বিমান সংস্থাগুলোকে যাত্রাপথ পরিবর্তনের নির্দেশ দিয়েছে।
কিন্তু আফগানিস্তানের সমস্যার কারণে যাত্রাপথ পরিবর্তন করতে হলে বহু বিমান ভারতের আকাশপথও ব্যবহার করতে পারবে না। তাদের সম্পূর্ণ অন্য রাস্তা নিতে হবে। যার কারণে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে।
ভারতীয় বিমানবন্দরের এক কর্মকর্তা বার্তাসংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘এতদিন বহু বিদেশি বিমান দিল্লি হয়ে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের ওপর দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতো। ভারতের আকাশসীমা ব্যবহারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থাগুলো দিল্লিকে বিপুল অংকের অর্থ দিতো। কিন্তু রুট পরিবর্তন হলে তারা ভারতের এয়ারস্পেসে ঢুকবে না।’
বস্তুত, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বহু বিমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ওপর দিয়েও যাতায়াত করে। সেই বিমানগুলোও রুট বদলাতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের আরেক কর্মকর্তার বক্তব্য, ইতোমধ্যেই বহু বিমান রুট পরিবর্তন করেছে। আফগানিস্তানের আকাশপথ দিয়ে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা দিল্লি এবং এবং পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করছে। তবে এতে করে তাদের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। অতিরিক্ত পথ অতিক্রম করতে হচ্ছে। ফলে অনেকেই পুরো রুট বদলে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
এর আগে পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মিরের বালাকোটে ভারতের বিমান হামলার পর বেশ কিছুদিনের জন্য পাকিস্তানের এয়ারস্পেস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সে সময়েও দিল্লির ওপর দিয়ে যাওয়া বিমান যাত্রাপথ পরিবর্তন করেছিল। ফলে ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল।
তবে সে ঘটনা ছিল সাময়িক। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি অনেক জটিল। আদৌ সেখানকার আকাশপথ অদূর ভবিষ্যতে ব্যবহার করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে। এবং সে কারণেই বহু বিমান সংস্থা নতুন রুট তৈরির পরিকল্পনা করছে।
এমনিতেই করোনার কারণে ভারতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। বিমানবন্দর সূত্র জানাচ্ছে, ভারত হয়ে পাকিস্তানে ঢোকা বিমানের সংখ্যা অন্তত ৬০ শতাংশ কমে গেছে। গত কয়েকমাসে বিমানের সংখ্যা সামান্য বেড়েছে। সংখ্যার হিসেবে ৫০০-র কাছাকাছি।
কিন্তু তালেবান সমস্যার জেরে সেই সংখ্যা ইতোমধ্যেই কমতে শুরু করেছে। বহু বিমান ইতোমধ্যেই ভারত-পাকিস্তানের আকাশ ছেড়ে চীনের আকাশ ব্যহার করছে। ওই পথেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো বিমান সংস্থা এই রুটের বিমান বন্ধ করে দেওয়ার কথাও ভাবছে। কারণ করোনায় বিমান সংস্থাগুলোরও বিপুল ক্ষতি হয়েছে। ফলে সাময়িক রুট বদলে তারা ক্ষতির পরিমাণ বাড়াতে চাইছে না।
কোনো বিমান যখন অন্য দেশের আকাশসীমায় ঢোকে তখন সেই দেশ তাকে এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) সেবা দেয়। তার বিনিময়ে বিমানসংস্থা ওই দেশের বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে মোটা টাকা দেয়। এর থেকে বড় লাভ হয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের। ভারতের ভয়, তালেবানের ভয়ে তাদের সেই উপার্জন অনেকটাই কমতে পারে।