অন্যদিকে দলের সাবেক এক সভাপতি ও এক মহিলা সাংসদ বলেছেন, তাঁরা পশ্চিমবঙ্গ ভাগ চান না। সপ্তাহ কয়েক আগে আলিপুরদুয়ার বিজেপির সাংসদ জন বারলা পৃথক উত্তরবঙ্গ রাজ্যের দাবি তুলেছিলেন। তিনি সেই দাবি তোলার পরেই তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নেওয়া হয়েছিল। ফলে মনে করা হয়, দাবির পেছনে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মদদ রয়েছে। একই বিষয়ে বিজেপি নেতাদের বিভিন্ন মতামত নেতা–কর্মীদের বিভ্রান্ত করার পাশাপাশি তৃণমূলকে সাহায্য করছে বলে বিজেপির অনেকেই মনে করছেন।
পশ্চিমবঙ্গ ভাগ নিয়ে নতুন বিতর্কের সূত্রপাত গত শনিবার যখন দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ পৃথক হওয়ার দাবি অযৌক্তিক নয়। সেখানকার মানুষ এই দাবি জানালে, তার জন্য দায়ী থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে উত্তরবঙ্গের কোনো উন্নতি হয়নি। চিকিৎসা, শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্যের জন্য অন্যত্র যেতে হয় উত্তরবঙ্গবাসীকে। কেন হাসপাতাল এখানে হলো না, মানুষ জানতে চায়।’
অপর দিকে গত রোববার ছিল রাখিবন্ধন উৎসব। ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’–এর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উৎসব শুরু করেছিলেন।
বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাবেক সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, ‘দিনটির বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে বিজেপির কাছে। রবীন্দ্রনাথ এই দিনটিতে বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রাখিবন্ধন উৎসব করেছিলেন। বিজেপিও অখণ্ড বাংলা ও অখণ্ড ভারতের দাবিতে সব সময় লড়াই করছে।’ বিজেপি সাংসদ লকেট চ্যাটার্জিও একই কথা বলেন।
সাবেক সভাপতির এই বক্তব্যের পরে নিজের মত বদলান বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি। ওই দিন সন্ধ্যায় জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়িতে এসে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘আমরা পৃথক রাজ্যের পক্ষে হলে কামতাপুর এবং গোর্খাল্যান্ড রাজ্যের দাবিকে সমর্থন করতাম। তা করিনি। আমরা বলেছি, মানুষ কেন এই দাবি তুলছেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত।’
রাজ্য ভাগের বিষয়টি যে বিজেপিকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলছে, তা স্বীকার করে রাজ্যের এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার কথা অবশ্যই বলা দরকার, বিশেষত যেহেতু সেখানে বিজেপি বারবার ভালো ফল করছে। কিন্তু রাজ্য ভেঙে প্রতিবাদ জানানোর কথা বারবার বলার ফলে আমাদের অবস্থান দুর্বল হচ্ছে।’
হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের এক নেতা বলেন, ‘বিজেপির নিশ্চয়ই কোনো বড় পরিকল্পনা আছে, তাই তারা বারবার এই কথা বলছে।’ দলের উত্তরবঙ্গের এক মধ্যম সারির নেতা বলেন, বিজেপি বারবার উত্তরবঙ্গে ভালো ফল করছে কিন্তু তারা কর্মীদের কিছুই দিতে পারছে না। তাদের চাঙা রাখতেই এটা করা হচ্ছে।