কৃষি ডেস্ক,
বর্তমান সময়ে কৃষকের ছে লে কৃষক হবে এমন কথা একেবারেই ভিত্তিহীন। কিন্তু কৃষির ওপর ভিত্তি করে আজও আমরা আমাদের সুখ-দুঃখের হিসাব-নিকাশ করে থাকি। দেশের কৃষির উৎপাদন কমে গেলে সারাদেশের মানুষের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। সমস্যাটি যেন শুধু কৃষকদের থাকে না, সবার মাঝেই ছড়িয়ে পড়ে। কৃষি দেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত। দেশের মোট জনসংখ্যার ৭০ ভাগ এবং শ্রমশক্তির ৫৫ ভাগ কোন না কোনভাবে কৃষিতে নিয়োজিত।
বর্তমানে দেশে কৃষিভিত্তিক শিল্পের মধ্যে পোল্ট্রি ফার্ম, ডেইরি ফার্ম, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প, মৎস্য উৎপাদন, হিমায়িতকরণ শিল্প রয়েছে। এসব শিল্পে বেশকিছু বড় বড় কোম্পানি বিনিয়োগ করছে।
বর্তমানে দেশে বেশ কিছু খ্যাতিসম্পন্ন কোম্পানি যেমন আকিজ, স্কয়ার, এসিআই কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পে বিনিয়োগ করছে এবং দৈনন্দিন জীবনের চাহিদামাফিক বিভিন্ন প্রকার খাদ্যদ্রব্য বাজারজাত করছে। অনেক কোম্পানি কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে কৃষকদের নিকট থেকে সরাসরি কৃষি পণ্য সংগ্রহ করছে। তবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের মূল কাঁচামাল কৃষি ফসল উৎপাদনে সরাসরি বড় প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায় না। ব্যক্তি ও পারিবারিক উদ্যোগে কিছু ফলমূল ও সবজি উৎপাদন এলাকা গড়ে উঠলেও বৃহৎ পরিসরে গড়ে উঠেনি কোন সুপরিকল্পিত কৃষি ফসল উৎপাদনমুখী ফার্ম। ফলে খাদ্যশস্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের জন্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের কৃষক এবং বর্গাচাষীরাই ভরসা যাদের উৎপাদনের হার কম।
দেশে কৃষি উৎপাদন ফার্ম গড়ে উঠলে পরিকল্পিতভাবে মাটির গুণাগুণ অনুসারে খণ্ড খণ্ড জমিগুলো এক করে ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে এবং উৎপাদন আরও বৃদ্ধি হবে। পাশাপাশি কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণও অনেকাংশে সহজ হবে।
দেশের দক্ষিণাঞ্চল খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এলাকায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমি লিজ নিয়ে বেশ কিছু মৎস্য খামার গড়ে উঠেছে। অন্যান্য এলাকায়ও এরূপ উদ্যোগ গ্রহণ করে কৃষি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। একই এলাকার আশেপাশের খণ্ড খণ্ড জমির মালিকদের নিয়ে কৃষি পণ্য উৎপাদনমুখী সমবায় সমিতি গঠন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের কৃষি ফার্ম গঠন করে সমন্বিত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করা যেতে পারে।
জমির মালিকদের নিকট থেকে বছরভিত্তিক লিজ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত কোনো সমবায় সমিতির মাধ্যমেও কৃষি ফার্ম গঠন করা যায়। নতুন নতুন এনজিও এবং কোম্পানি প্রতিষ্ঠাপূর্বক তাদের মাধ্যমে কৃষি ফার্মভিত্তিক চাষাবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করলে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অনেক সহজ হবে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠী জমি লিজ হতে প্রাপ্ত অর্থের পাশাপাশি এসব ফার্মে কাজ করে অর্থ উপার্জনও করতে পারবে। ফার্মের কাজের বাইরে বাকি সময়ে নিজের কাজ করলে অর্থনীতিতে ছদ্মবেশী বেকারের হারও হ্রাস পাবে। কৃষি ফার্মে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ গ্রহণের পাশাপাশি বৃহৎ ফার্মে বা কয়েকটি ছোট ছোট ফার্মকেন্দ্রিক একজন করে কৃষিবিদ নিয়োগ করলে ফার্মভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা কৃষিখাতকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিবে। ফলে কৃষি কাজের সামাজিক মর্যাদাও বাড়বে এবং শিক্ষিত বেকার শ্রেণীকে চাকুরি হিসেবে কৃষিখাতে নিযুক্ত করা সম্ভব হবে। কারণ একজন শিক্ষিত বেকার মাঠে চাষাবাদের বদলে একই কাজ প্রতিষ্ঠিত কৃষি ফার্মে করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
ফার্মে জনসাধারণের কর্মসংস্থানের ফলে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নতি সাধন হবে এবং নগরায়ন সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক কৃষি ঋণ বিতরণের পাশাপাশি এসব ফার্মে ঋণ প্রদানপূর্বক কার্যকর কৃষি ঋণের পরিমাণও অনেকগুণ বাড়াতে পারবে।
আমাদের পাশের দেশগুলোতে কৃষি ফার্ম গড়ে উঠছে। আমাদের দেশের জমির মালিক পক্ষ, ফার্ম পরিচালনাকারী কোম্পানি বা এনজিও, প্রশাসন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির সমন্বয় করে কৃষি ফার্ম গঠন কিছুটা কষ্টসাধ্য হলেও উদ্যোগ গ্রহণ করলে সেটা অবশ্যই সম্ভব। এরূপ কয়েকটি ফার্ম প্রতিষ্ঠিত হয়ে লাভের মুখ দেখলে বড় এবং মাঝারি আকারের প্রতিষ্ঠান কৃষি ফার্মভিত্তিক বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। এর ফলে, সমন্বিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বেকারত্ব হ্রাসেও কৃষি ফার্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
বিএসডি/এএ