আকন্তর্জাতিক ডেস্ক,
তালেবান কিভাবে এত স্বল্প সময়ের মধ্যে আফগানিস্তানের মতো একটি দেশকে পুরো নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তা নিয়ে গত দশ দিন ধরে চলছে ব্যাপক আলোচনা। এর মধ্যেই তালেবানের নতুন কমান্ডো বাহিনীর ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় তা নিয়ে বিশ্ববাসী বিশেষ করে পশ্চিমাদের আগ্রহ তুঙ্গে উঠেছে।
তালেবান শব্দটি মূলত ব্যবহৃত হয় মাদরাসাছাত্রদের ক্ষেত্রে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাদের পোশাক ঢিলেঢালা পাঞ্জাবি, পায়জামা, পাগড়ি ও সাধারণ স্যান্ডেল। আগে পাঁচ বছর দেশ শাসন করা তালেবান যখন সম্প্রতি আবারো কাবুল দখল করেছে, তখনো তাদের দেখা গেছে প্রায় ওই পোশাকেই। হাতে ভারি অস্ত্র থাকলেও পোশাক ওই আগের মতোই।
কিন্তু এরই মধ্যে চোখে পড়েছে পুরোপুরি পেশাদার কমান্ডোর মতো একটি গ্রুপকে। কদিন আগেই সামান্য পরিসরে জানা গিয়েছিল, এটি তালেবানের কমান্ডো গ্রুপ ‘বদরি ৩১৩’। আমেরিকান অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত এসব কমান্ডোর গায়ে রয়েছে জাদরেল কমান্ডোর বাহিনীর মতোই ইউনিফর্ম, বুট, বালাক্লাভস ও বডি আর্মার। বিশ্বজুড়ে পরিচিত রাশিয়ার কালাশনিকভ রাইফেলের পরিবর্তে তাদের হাতে লেটেস্ট মডেলের নতুন মার্কিন রাইফেল-কার্বাইন, কখনোবা তাদের চোখে দেখা যাচ্ছে নাইট-ভিশন গগলস। টহল দিচ্ছে আধুনিক হামভি গাড়িতে করে।
সম্প্রতি তাদের ঘিরে পশ্চিমা বিশ্বের বেশ আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। তারা আসলেই কতটুকু দক্ষ, তাদের হাতে কী ধরনের অস্ত্র রয়েছে, তাদের পরিমাণ কত এগুলো নিয়ে তারা চুলচেরা বিশ্লেষণে মেতে ওঠেছে। কিন্তু কারো কাছেই সঠিক পরিসংখ্যান না থাকায় শেষ পর্যন্ত তারা ধারণাভিত্তিক আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকতে বাধ্য হচ্ছে।
জেনেস ডিফেন্স কনসালটেন্সি নামক প্রতিষ্ঠানের ম্যাট হেনম্যান এ বাহিনী সম্পর্কে বলেন, সম্ভবত তালেবানের মধ্যে কিছু সেরা প্রশিক্ষিত এবং সজ্জিত যোদ্ধাদেরকেই তারা বদরি ৩১৩ নামে প্রচার করছে। তারা এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কভারেজ নিতে চাইছে।
ক্যালিবার অবস্কুরা ছদ্মনামে লেখা একজন পশ্চিমা অস্ত্র বিশেষজ্ঞ টুইটারে বলেন, ইউনিটটি পশ্চিমা বিশেষ বাহিনী অথবা ভারত বা পাকিস্তানের সাথে হয়তো তুলনায় যাবে না, কিন্তু তারা সাধারণ তালেবানের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর। তিনি তাদেরকে আফগান জাতীয় সেনাবাহিনীর মানদণ্ডের চেয়ে অনেক বেশি ভাল বলেও উল্লেখ করেন।
পশ্চিমা বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, তালেবানের এ ইউনিটের সদস্য সংখ্যা কয়েক হাজার পর্যন্ত হতে পারে। তাদের হাতে কী পরিমাণ অস্ত্র আছে তা নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই একটি কৌতুহল কাজ করছে সবার মধ্যে। এ অবস্থায় বদরি ৩১৩-এর সদস্যদের আর্মার্ড হামভি, বিমান ও অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের মদদপুষ্ট আফগান সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করেই মার্কিন এসব অস্ত্রশস্ত্র হস্তগত করেছে। তবে তারা বলছেন, এসব অস্ত্র ও সামরিক যানগুলো পরিচালনা করা কষ্টকর, বিশেষ করে এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ তো প্রায় অসম্ভবই।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লং ওয়ার জার্নালের ম্যানেজিং এডিটর বিল রোজিও বলেন, এক্ষত্রে প্রোপাগাণ্ডা তো আছেই, কিন্তু গত মে মাস থেকে তালেবানের অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে এ গ্রুপটির অবশ্যই বড় অবদান রয়েছে। যখন তারা আফগান বাহিনীকে দমন করতে শুরু করে, সে সময় তারা পশ্চিমাদের দেয়া অস্ত্রগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। আর এভাবেই যাদের দমন করতে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র দিয়েছিল আফগান সরকারকে, সেগুলোই দিয়েই নিজেদের অস্ত্রে সুসজ্জিত করে তালেবান।
কাবুল দখলের পর থেকে মার্কিন সেনারা হামিদ কারজাই বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে দায়িত্ব পালন করছে। আর বাইরে দায়িত্ব পালন করে তালেবানের বদরি ৩১৩। এ সময়ে বিমানবন্দরের ভিতরে সংঘর্ষ, মৃত্যুর খবর পাওয়া গেলেও বাইরে এ ধরনের কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের এত কড়া নজরদারির মধ্যেও বদরি ৩১৩ কোথায় প্রশিক্ষণ পেল, তা নিয়েও রয়েছে গুঞ্জন। কেউ কেউ বলছেন, গ্রুপটিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। মার্কিন অ্যাডমিরাল মাইক মুলেন তাদেরকে ইসলামাবাদের গোয়েন্দাদের সত্যিকার বাহু হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। জেনেসের হেনম্যান বলেন, এ বিষয়ে প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে যে, পাকিস্তান এ ইউনিটকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
এদিকে প্যারিসের সোরবোন বিশ্ববিদ্যালয়ের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গিলস ডোরনসোরো বলেন, তালেবান কমান্ডোদের আবির্ভাব সেখানকার একটি বৃহত্তর প্রবণতারই অংশ। আমরা ২০০০-এর মাঝামাঝি থেকে তালেবানদের অসাধারণ পেশাদারিত্ব দেখেছি। তারা মাটি থেকে শিখেছে এবং তারা প্রযুক্তিগতভাবে খুব ভালোভাবে প্রশিক্ষিত।
সূত্র: আরব নিউজ
বিএসডি/এ এ