আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
আফগানিস্তানে তালেবানরা ক্ষমতায় ফিরে আসায় কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদের উত্থান ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে ভারত। এর মাধ্যমে পাকিস্তানভিত্তিক গোষ্ঠীগুলোকেও ভারতে হামলা চালাতে অনুপ্রেরণা জোগাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে কাশ্মীর নিয়ে কয়েক দশক ধরে আঞ্চলিক বিরোধে আটকে আছে নয়াদিল্লি।
গত ২৪ আগস্ট (মঙ্গলবার) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে এক টেলিফোন আলাপে এ ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসবাদ ছড়াতে দেওয়া উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন মোদি। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে বিশদ আলোচনা হয় দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে।
এর আগে ২৩ আগস্ট রাতে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেলের সঙ্গে আফগানিস্তানসহ একাধিক ইস্যুতে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মার্কেলের সঙ্গে আলোচনায় বিশ্ব নিরাপত্তায় তালেবানদের পুনরুত্থানের প্রভাব নিয়ে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
আফগানিস্তানে তালেবানের পুনরুত্থান ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দেখা দিয়েছে। কারণ মধ্য এশিয়ার কেন্দ্রে অবস্থিত দেশটি আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কাশ্মীর বিরোধসহ আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আফগানিস্তানের সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে।
২০০১ সালে পূর্ববর্তী তালেবান শাসনের পতনের পর ভারত আফগানিস্তানের মার্কিন সমর্থিত গণতান্ত্রিক সরকারের সাথে অবকাঠামো নির্মাণে কাজ করেছিল। এদিকে, পাকিস্তান ১৯৯৪ সালে তালেবানকে তার ক্ষমতায় আসতে সমর্থন করেছিল। এবং বিশ্বাস করা হয় যে পাকিস্তান তার চীরশত্রু ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পাল্টে দিতে পর্দার আড়ালে থেকে তালেবানকে সাহায্য করে আসছে।
আফগানিস্তানে পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারের জন্য পাকিস্তান তালেবানের সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। কিছু পর্যবেক্ষক অনুমান করেন যে, পাকিস্তান মধ্য এশিয়ায় তার প্রভাব বাড়ানোর জন্য চীন এবং রাশিয়ার সাথে সহযোগিতা করবে।
নয়াদিল্লির যে দৃশ্যটি সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা করছে তা হলো, তালেবানের জয় প্রতিবেশী পাকিস্তানে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে উৎসাহিত করে, যা ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের নিরাপত্তা বিপন্ন করবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর এপ্রিল মাসে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করার পর থেকে কাতারের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বারবার এই উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জুন মাসের একটি প্রতিবেদনে তালেবান এবং আল-কায়েদার মধ্যে গভীর সম্পর্ক উল্লেখ করা হয়েছে। দলিল অনুসারে, এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দুটোর প্রভাব পাকিস্তান, ভারত, মিয়ানমার এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বিস্তৃত।
কাশ্মীর পরিস্থিতি ইদানীং শান্ত থাকলেও পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এই ভূখন্ড নিয়ে তিনটি সর্বাত্মক যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছে। এই অঞ্চলে সর্বশেষ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিমান হামলা চালানো হয়েছিল।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস।
বিএসডি/এএ