নিজস্ব প্রতিবেদক,
চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নদী পাড়ি দিচ্ছে। চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেস্বর ইউনিয়নসহ পাশের জেলা শরীয়তপুরের মানুষও চাঁদপুরের নদীপথে যাতায়াত করে। স্কুল, মাদ্রাসা ও কলেজগামী শত শত শিক্ষার্থীসহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্টিলের ট্রলারে করে উত্তাল পদ্মা-মেঘনা পারাপার হতে হয়।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটলেও চাঁদপুরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব বন্ধে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ঝুঁকি জেনেও লাইফ জ্যাকেট ও বয়া ছাড়াই ট্রলারে মালামালসহ যাতায়াত করছে যাত্রীরা।
চাঁদপুর শহর থেকে প্রতিদিন মেঘনা নদীর পশ্চিমের ৩০টি চরের মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পদ্মা-মেঘনা নদী পাড়ি দিচ্ছে। এসব এলাকার মাঝি ও চালকরা কোনো নিয়মনীতি মেনে না চলায় যাত্রীদের মাঝে সর্বদা আতঙ্ক বিরাজ করে। ট্রলারগুলোতে পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া না থাকায় প্রতিনিয়তই থাকে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। যদিও জেলা প্রশাসন থেকে কিছু লাইফ জ্যাকেট ও বয়া দেওয়া হলেও ট্রলারের মাঝিরা সেগুলো ব্যবহার করছেন না।
চাঁদপুর শহরের বড়স্টেশন মোলহেড ও পুরানবাজার নদীতীরে গিয়ে দেখা গেছে, চাঁদপুর শহরের পুরানবাজার থেকে শরীয়তপুর জেলা, ফেরিঘাট, দক্ষিণ তারাবুনিয়া মোল্লার বাজার, উত্তর তারাবুনিয়া চেয়ারম্যান স্টেশন, রাজরাজেশ্বর ঘাট, বাঁশগাড়ী, মতলব উত্তরের জহিরাবাদ, চরবাঘা ইউনিয়ন, গৌরাঙ্গের বাজার, শরীয়তপুরের কাঁচিকাটা চরে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক ট্রলার যাতায়াত করে থাকে। আর প্রতিটি ট্রলারেই গাদাগাটি করে ঝুঁকি নিয়ে নদী পাড়ি দিচ্ছে। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
রাজরাজেশ্বরের যাত্রী ইকবাল ও শরীয়তপুরের তারাবুনিয়ার যাত্রী মিনহাজ গাজী বলেন, ব্যবসায়িক কাজে প্রতিদিন আমাদের ট্রলারে করে পদ্মা-মেঘনা পাড়ি দিতে হয়। আগস্ট-সেপ্টেম্বর এই দুই মাস পদ্মা-মেঘনা উত্তাল থাকে। তীব্র স্রোতে পড়ে ট্রলার ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যে কারণে ট্রলারের সব যাত্রীর জীবনের ঝুঁকি থেকে যায়। অধিকাংশ ট্রলারে বয়া ও লাইফ জ্যাকেট নেই। যাদের আছে, তারাও ব্যবহার করে না। আমরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে প্রতিটি ট্রলারে বয়া ও লাইফ জ্যাকেট নিশ্চিত করা হয়।
ট্রলারের মাঝি রফিকুল ইসলাম বলেন, দু-এক বছর আগে প্রশাসন থেকে কিছু লাইফ জ্যাকেট মাঝিদের দিয়েছে। যা দিয়েছে, তা পর্যাপ্ত না। এর মধ্যে আবার অনেকেই পায় না। আমাদের তেমন কোনো রুজি নেই যে আমাদের টাকা দিয়ে বয়া-জ্যাকেট কিনব।
মাঝি সমবায় সমিতির সভাপতি সেলিম মোল্লা বলেন, চাঁদপুরের চলাঞ্চলের মানুষ ছাড়াও অন্যান্য জেলার মানুষ পদ্মা-মেঘনা দিয়ে যাতায়াত করে। তাই প্রতিদিন এখানে লোকসমাগম থাকে। ট্রলারে কিছু বয়া ও লাইফ জ্যাকেট থাকে, যা দিয়ে আমাদের হয় না। এ ছাড়া অনেক যাত্রী ব্যবহার করতেও চায় না। নির্দিষ্ট যাত্রীদের জন্য সব ট্রলারে আরও বয়া ও লাইফ জ্যাকেট দরকার। প্রশাসন দিলে আমরা উপকৃত হতাম।
রাজরাজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ব্যবসায়িক, চিকিৎসা, লেখাপড়াসহ বিভিন্ন কাজে ঝুঁকি নিয়ে ট্রলারে করে নদী পাড়ি দিচ্ছে লোকজন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে নদী বেশি উত্তাল থাকে। এতে ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যায়। আমি নিজেও অনেকবার পদ্মা-মেঘনার উত্তাল টেউয়ে পড়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ কিছু করা দরকার।
চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা-মেঘনায় আমাদের সার্বক্ষণিক টহল থাকে। আমাদের পক্ষ থেকে ট্রলারের মাঝিদের বারবার সতর্ক করা হয়। যাতে তারা পর্যাপ্ত লাইফ জ্যাকেট ও বয়া রেখে ঘাট থেকে ট্রলার ছাড়ে।
বিশেষ করে বর্ষায় ভাটার সময় নদীর তীব্র স্রোত থাকে। এতে ভাটার সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা বেশি থাকে। আমরা সেই সময়ে ট্রলারের মাঝিদের ঝুঁকি এড়িয়ে চলাচল করতে নির্দেশনা প্রদান করি।
বিএসডি/আইপি