পরিপাটি গোছানো ঘর সবারই পছন্দ। সারা দিন শেষে মন যেখানে প্রশান্তি খুঁজে পায়, খুঁজে পায় স্বস্তি, সাজানো–গোছানো ঘর এমনই একটি জায়গা। হতে পারে তা সুবিশাল অট্টালিকা বা একটি ছোট ফ্ল্যাট। বসবাসের জায়গাটা ছোট হোক অথবা বড়, সেটা যদি হয় ছিমছাম আর পরিপাটি, বাড়িতে ঢুকলেই মন ভালো হয়ে যাবে।
যাঁরা চীন ভ্রমণে গেছেন, তাঁরা হয়তো লক্ষ করেছেন, সেখানকার ঐতিহ্যবাহী রেস্তোরাঁগুলো বাঁশ দিয়ে সজ্জিত। রেস্তোরাঁজুড়ে বাঁশের সাজসজ্জা। চায়নিজ রেস্টুরেন্টগুলো এখনো তাদের এই ঐতিহ্য অনেকটাই ধরে রেখেছে। এগুলো দেখলেই মনে প্রশান্তি চলে আসে। চাইলে আপনিও এমনভাবে সাজাতে পারেন আপনার সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গাটি। ফ্লোর থেকে শুরু করে আসবাব, ঘর সাজানোর শোপিস—সবকিছুতেই রাখতে পারেন বাঁশের ছোঁয়া।
জেনে রাখা ভালো, সবধরনের বাঁশ কিন্তু এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় না। যেসব বাঁশ হালকা, নমনীয় এবং প্রাকৃতিকভাবে শক্তিশালী, সেগুলোই ব্যবহৃত হয়। বাড়ির সাজসজ্জায় ব্যবহার করা যায়, এমন একটি চমৎকার উপাদান বাঁশ। বাঁশের সেরা সুবিধা হলো, এটি সবধরনের আবহাওয়ার উপযোগী। তাই এটি যেকোনো জায়গার জন্য উপযুক্ত। ঘরে বাঁশের ব্যবহারে ভিন্ন ধরনের আকর্ষণ তৈরির কিছু উপায় এখানে দেওয়া হলো।
বাড়িতে প্রবেশের মুখেই রাখা যেতে পারে বাঁশের তৈরি ফুলদানি। ড্রয়িংরুমে থাকতে পারে বাঁশের তৈরি সোফা, যা ঘরে তৈরি করবে নান্দনিক ও রুচিসম্মত পরিবেশ। বাঁশের তৈরি কফি টেবিলও রাখা যেতে পারে। দেয়ালে বাঁশের তৈরি ছবির ফ্রেম, ঘর সাজানো শোপিস, বুকশেলফ আর কোনায় বাঁশের তৈরি লম্বা ফুলদানি ঘরটিকে অনেক গুণ আকর্ষণীয় করে তুলবে। আর বাসাটা যদি হয় ড্রয়িং কাম ডাইনিং, তাহলে ব্যবহার করতে পারে বাঁশের পার্টিশন।
বাঁশের বিভাজন ব্যবহারের পর জায়গাটি মোটেও ছোট মনে হবে না। বাঁশের পার্টিশন প্রয়োজনমতো যখন-তখন সরিয়েও রাখা যায়। এতে ঘর আরও পরিপাটি দেখায়। বলা যায়, বাঁশের ব্যবহার বহুমুখী। এ ছাড়া বাঁশের সাহায্যে আধুনিক, নান্দনিক ও ঐতিহ্যবাহী আসবাবও তৈরি করা যায়। এগুলো আবার সহজে ফিটও হয়।
বাঁশের তৈরি ডাইনিং টেবিল–চেয়ারও রুচিসম্মত পরিবেশ তৈরি করবে। আবার সৌন্দর্যবর্ধনে ব্যবহার করা যায় বাঁশের তৈরি বিভিন্ন আকৃতির ঝুড়ি। শোবার ঘরের খাটের পাশে বাঁশের তৈরি সাইড টেবিল বা ডিভান মানাবে ভালো। তাতে বাঁশ দিয়ে বানানো টেবিল ল্যাম্প, কিংবা ঘরে ঝোলানো ল্যাম্পশেডও রাখা যায়। বাঁশের তৈরি প্রয়োজনীয় ক্যাবিনেট এবং বাঁশের কারুকাজ করা আয়না রাখা যায় শোবার ঘরে। এতে আপনার বেডরুমটাও পাবে নান্দনিকতার ছোঁয়া।
রান্নাঘর পরিপাটি রাখুন বাঁশ দিয়ে বানানো মসলার বক্স, প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার র্যাক বা শেলফ, বাঁশের তৈরি টিস্যু হোল্ডার দিয়ে। বারান্দায় রাখতে পারেন বাঁশের মোড়া। বাসার সামনে বা ছাদে যদি ছোট বাগান থাকে, সেখানে এক জোড়া বাঁশের চেয়ার আর টি–টেবিল রাখলে মনে হবে প্রকৃতির খুব কাছাকাছি বসবাস করছেন।
নতুন সংসার নতুনভাবে সাজানোই সবার ইচ্ছা। ঘরে নান্দনিকতার ছোঁয়া আনতে বাঁশের আসবাব ব্যবহার করতে পারেন। কাঠের আসবাবের আবেদন সব সময়ের জন্যই। কারণ, যাঁরা নিজের ঘরের সাজটা ব্যতিক্রমী করতে চান, তাঁরা খুব সহজেই কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশের আসবাব ব্যবহার করতে পারেন। বাঁশের তৈরি আসবাব এখন বেশ সহজলভ্য, সুলভ আর বহনেও বেশ সহজ।
বাঁশের তৈরি আসবাবের রঙেও এসেছে ভিন্নতা। প্রাকৃতিক রং ছাড়াও সাদা, ধূসর, ক্রিম, কফি বা কালো রংও ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া পছন্দ অনুযায়ী নকশাও করিয়ে নেওয়া যায়। ছোট ছোট ঘর সাজানোর সরঞ্জামও কেনা যায়। টু সিটার, ট্রে, টেবিল প্লেসমেট, টেবিল রানার, ফুলের টব ইত্যাদি থাকতে পারে তালিকায়।