লাইফস্টাইল ডেস্ক,
বাংলাদেশের মতো গ্রীষ্মপ্রধান দেশে জন্ডিস খুবই প্রচলিত অসুখ। প্রকৃত পক্ষে জন্ডিস কোনো রোগ নয়। জন্ডিস মানে যকৃতের প্রদাহ বা হেপাটাইটিস। এটি রোগের লক্ষণ বা উপসর্গ মাত্র। জন্ডিস বলতে বুঝায়, লিভারের যেকোনো জটিলতার কারণে চোখ হলুদ হওয়া, প্রস্রাব হলুদ হওয়া, খাওয়ায় অরুচি, মুখগহ্বর হলুদ হওয়া এবং কারো কারোর ক্ষেত্রে চামড়া পর্যন্ত হলুদ হয়ে যাওয়া। এসবকে জন্ডিসের লক্ষণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে জন্ডিস হওয়া মানে কিন্তু লিভার কোনা কোনাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বা আক্রান্ত হয়।
লিভারের ক্ষতি
ভাইরাস থেকে শুরু করে নানান ধরনের ওষুধ, অ্যালকোহল ইত্যাদি কারণে লিভারে প্রদাহ হতে পারে। আমাদের দেশে লিভার প্রদাহের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস ই, এ এবং বি ভাইরাস। এর মধ্যে প্রথম দুটি পানি ও খাদ্যবাহিত আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে। হেপাটাইটিস এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ, তবে যেকোনো বয়সের মানুষই হেপাটাইটিস ই ও বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
ভুল চিকিৎসা নয়
জন্ডিস যেহেতু কোনো রোগ নয়, তাই এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই। ৭ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমনিতেই সেরে যায়। এ সময়টাতে খুব বেশি করে দরকার বিশ্রাম। বলা যায় বিশ্রামই এ রোগের চিকিৎসা। ব্যথার ওষুধ যেমন: প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, ঘুমের ওষুধসহ অন্য কোনো অপ্রয়োজনীয় ও কবিরাজি ওষুধ খাওয়া মোটেও উচিত নয়। এককথায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধই সেবন করা ঠিক না। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার ঝুঁকিটাই বেশি থাকে।
কী খাবেন
-
- পানি প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। অন্তত আট গ্লাস পানি পান করুন। তবে অতিরিক্ত পানি পানের প্রয়োজন নেই। পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। আখের রস, ডাবের পানিও শরীরে পানির চাহিদা পূরণ করে। তবে রাস্তার পাশের আখের শরবত না পান করে ঘরে তৈরি শরবত খেতে পারেন।
-
- লেবু, বাতাবি লেবুর শরবত জন্ডিস রোগীর জন্য খুবই ভালো। এগুলো শরীরে পানির চাহিদা পূরণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অবশ্য জন্ডিসের সময় বাতাবি লেবু খাওয়া আমাদের বাঙালি ঘরের পুরনো রীতি।
-
- প্রতিদিন বাদামও পরিমাণমতো খেতে পারেন। সামান্য আদা কুঁচি বা রসুন কুঁচি, আদার রস বা আদা চা খাওয়া যেতে পারে দিনে দুই-একবার। এগুলো যকৃতের জন্য ভালো।
-
- মাছ, মুরগির মাংস, ডাল পরিমাণমতো খেতে হবে। না হলে রোগী দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। অনেকে মনে করেন, জন্ডিসে আক্রান্ত রোগী মাছ-মাংসজাতীয় খাবার খেতে পারবেন না। এটা মারাত্মক ভুল ধারণা।
-
- কার্বোহাইড্রেটের চাহিদা পূরণে বাদামি চাল, রুটি, ওটস খেতে পারেন। গোটা শস্যে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন থাকে, যা ক্ষতিকর টক্সিন বের করে দেয়। এছাড়া মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টি আলু, মুলা, বিট, গাজর, টমেটো, ব্রকলি, ফুলকপি, বাঁধাকপি ও পালংশাক জন্ডিস রোগীর জন্য খুব ভালো।
- জন্ডিস থেকে সুস্থতার পথে স্যুপ ও বিভিন্ন ফল রাখতে পারেন পথ্যে। বেরিস, পেঁপে, তরমুজ, আনারস, পাকা আম, কলা, কমলা, জলপাই, অ্যাভোকাডো, আঙুরের মতো সহজপাচ্য ফল প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন।
বিএসডি/এএ