আন্তর্জাতিক ডেস্ক,
কাবুল বিমানবন্দর থেকে শেষ মার্কিন সেনা চলে যাওয়ার পরেই উল্লাসে ফেটে পড়ে তালেবান। এরপরই তালেবান সদস্যরা বিমানবন্দরের দখল নিয়ে নেয়। তারা শূন্যে গুলি চালিয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। তালেবান জানিয়েছে, তারাই বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বিমানবন্দর চালু রাখতে গেলে দুইটি জিনিস প্রয়োজন। প্রথমত, প্রযুক্তির দিকটা দেখতে পারবেন এবং বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করতে পারবেন এমন প্রশিক্ষিত কর্মীদের দল। দুই, বিমানবন্দরের ভেতরে ও বাইরে সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন, এমন প্রশিক্ষিত কর্মীরা।
তালেবানের কাছে এর কোনোটাই এই মুহূর্তে নেই। তারা বিমানবন্দরের দখল নিয়ে সেখানে নিরাপত্তা দেবে বলছে, কিন্তু তারা এই কাজে প্রশিক্ষিত নয়। তাই প্রশ্ন উঠছে, তালেবান কি এই নিরাপত্তা দিতে পারবে?
বিমানবন্দর চালু রাখার মতো প্রযুক্তির জ্ঞান ও ব্যবহার জানা দক্ষ প্রশিক্ষিত মানুষও তালেবানের কাছে নেই। তারা তাই তুরস্ককে বিমানবন্দর চলানোর কাজটা করতে বলেছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এই প্রস্তাব বিবেচনা করছেন।
এতদিন এই বিমানবন্দর চালাত মার্কিন ও ন্যাটো বহিনী। তারা বিমানবন্দরের সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত করতো। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষিত কর্মীরা বিমান চলাচলের দিকটা দেখতেন। তালেবান নিষেধ করা সত্ত্বেও প্রশিক্ষিত আফগান কর্মীরা অধিকাংশই দেশ ছেড়েছেন। তাই কাবুল বিমানবন্দর কীভাবে চলবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
তালেবান মুখপাত্র কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেছেন, তালেবানই বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে। তারাই বিমানবন্দরের ভেতর ও বাইরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। সংবাদসংস্থা এএফপি’কে তালেবান মুখপাত্র বিলাল করিম বলেছেন, ‘আমাদের যোদ্ধা ও বিশেষ বাহিনী বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে। তার জন্য অন্য কারও সাহায্যের দরকার হবে না।’
কিন্তু দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ এবং ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিঙ্কট্যাঙ্কের সদস্য কুগেলম্যান বলেছেন, যদি এয়ারলাইন্সগুলোকে ফিরে আসতে হয়, তা হলে বিদেশি নিরাপত্তা কর্মীদের সেখানে থাকা জরুরি। কারণ, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এয়ারলাইন্সের শঙ্কা থাকাটা স্বাভাবিক। বাণিজ্যিক ও যাত্রীবাহী বিমান চলাচলকারী সংস্থা নিরাপত্তার বিষয়টি দেখেই বিমান চালাবে।
কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, (বিমানবন্দর পরিচালনার ক্ষেত্রে) তালেবান বিদেশি সহায়তা গ্রহণ করুক, এটা তারা চান। তারা তালেবানকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, বিমানবন্দরের নিরাপত্তার অনেকগুলো দিক আছে। সেখানে প্রশিক্ষিত নিরাপত্তা রক্ষী দরকার।
অন্যদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নেড প্রাইস বলেছেন, তারা আফগান জনগণকে বিমানবন্দর ফিরিয়ে দিয়েছেন। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ন্যাটোর প্রশিক্ষিত কর্মীরা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, জ্বালানির বিষয়টি এবং যোগাযোগের দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন।
অবশ্য তালেবান এখন তুরস্ককে এই দায়িত্ব সামলাতে অনুরোধ করেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান এখনও পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তিনি বলেছেন, তালেবান নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজ হাতে তুলে নিয়েছে। কিন্তু তারা কীভাবে নিশ্চিত করবে যে, বিমানবন্দরে আবার আক্রমণ হবে না, রক্তাক্ত হবে না বিমানবন্দর?
প্রশিক্ষিত কর্মী ছাড়া বিমানবন্দর চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু তালেবানের ভয়ে প্রশিক্ষিত আফগানরা কাবুল ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, এত প্রশিক্ষিত কর্মী কোথা থেকে পাবে তালেবান?
তালেবান জানিয়েছে, বেসামরিক আফগানদের বিদেশে যাওয়া ও দেশে ফেরার জন্য তারা বিমান চলাচল অব্যাহত রাখতে চায়। কিন্তু বাণিজ্যিক বিমানের কি হবে? নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত না হলে তারা কাবুল বিমানবন্দরে আসবে না।
তালেবান যদি বিমানবন্দর চালু রাখতে পারে, তা হলে তাদের আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তাদের সেনা চলে আসার পর কাবুল বিমানবন্দরে এখন এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ব্যবস্থা কাজ করছে না। আগাম অনুমতি ছাড়া কোনো মার্কিন বেসামরিক বিমান কাবুলে যেতে পারবে না।
কাবুল বিমানবন্দরের অবস্থা একেবারেই ভালো নয়। তলেবান কাবুল দখল করার পর বিমানবন্দরে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে অনেক জরুরি অবকাঠামো নষ্ট হয়ে গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারাও জানিয়েছেন, বিমানবন্দরের অবস্থা শোচনীয়। তবে আশার কথা এই যে, রানওয়ে এখনও ঠিক আছে।
বিএসডি/এএ