নিজস্ব প্রতিবেদক,
কক্সবাজারের রামুতে লোকালয়ে চলে আসা এক মা হাতিকে শর্টসার্কিটে হত্যার পর শরীর থেকে মাথা ও পা বিচ্ছিন্ন করে পুঁতে ফেলার চেষ্টা করেছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় একই পরিবারের ৫ জনসহ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেছে বন বিভাগ। নজির আহমেদ নামে একজনকে গ্রেফতারও করা হয়। সেই আসামিকে নিয়েই চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে বন কর্মকর্তাদের।
বন বিভাগ জানায়, মঙ্গলবার (৩১ আগস্ট) নজির আহমেদকে গ্রেফতারের সময় তার একটি পায়ে প্লাস্টার করা ছিল। তখন সে দাবি করেছিল পারিবারিক বিরোধের জেরে সংঘর্ষে তার পা কেটে ফেলা হয়। যেহেতু প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হাতি হত্যার বিষয়টি শিকার করে নজির, তখন তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পরের দিন বনকর্মীরা চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে চিকিৎসক জানান, আসামির পায়ে থাকা প্লাস্টার শুধু অভিনয়। পরে সেই প্লাস্টার খুলে দেখা যায় তার পায়ে কোনো ক্ষত নেই। যা দেখে রীতিমতো হতবাক হয়েছেন বন-বিভাগের কর্মকর্তারা।
পরে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের আসামি নজির আহমেদ জানায়, পারিবারিক বিরোধে তার এক প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন। সে সুবাধে পায়ে অভিনব পন্থায় প্লাস্টার লাগিয়েছেন। যা কাজে লেগেছে হাতি হত্যার মামলায়। পায়ে প্লাস্টার লাগানো বা ঠিকভাবে হাঁটতে না পারার অজুহাতে ফাঁদ বসিয়েছিলেন। যাতে বন বিভাগ তাকে ছেড়ে দেয়।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, মঙ্গলবার হাতিটিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর পুঁতে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। যার জন্য নজির আহমেদসহ অন্যরা হাতিটির মাথা ও পা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে।
এ ঘটনায় রামুর খুনিয়াপালংয়ের ধোয়াপালং এলাকার মৃত আলী হোসেনের ছেলে নজির আহমেদ, তার স্ত্রী শাহেদা আক্তার, নজিরের ছেলে তৈয়ব আলী, আয়ুব আলী ও মোহাম্মদ আলমকে মামলায় আসামি করা হয়। বাকি ৭ আসামি ওই এলাকার অজ্ঞাত সহযোগী বলে উল্লেখ্য করা হয়েছে।
এর আগে, ৩১ আগস্ট ভোররাতে রামু উপজেলার ধোয়াপালং এলাকায় ধানক্ষেতে চলে আসে একটি মা হাতি। সেখানে নজির আহমেদের পরিবারের শর্টসার্কিটের ফাঁদে পড়ে হাতিটির মৃত্যু হয়। এর পর শরীর থেকে হাতিটির মাথা ও পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়। পরে বন-বিভাগ খবর পেয়ে তাদের ধাওয়া করে। সবাই পালিয়ে গেলেও কৌশলী নজির থেকে যায়। তাকে আটক করা হয়।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, রোহিঙ্গারা আসার পরে আবাসস্থল হারিয়েছে দক্ষিণ বন-বিভাগের আওতাধীন এলাকায় থাকা হাতিরা। একই সঙ্গে চরম খাদ্যসংকটের কারণে লোকালয়ে চলে আসছে। কিন্তু তাদের শান্তভাবে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়।
দক্ষিণ বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, গেল ৪ বছরে ৯টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। যার মধ্যে তিনটিকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার প্রমাণ মিলেছে। তবে গেল মঙ্গলবার নিহত হাতিটিকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে উখিয়া-টেকনাফের বনাঞ্চলে এখন ৬৩টি হাতি রয়েছে। যেখানে শিশু হাতির সংখ্যা ৫।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণয় চাকমা বলেন, রামুতে হাতির প্রতি অবিচার করছে কিছু লোক। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। একই সঙ্গে হাতির প্রতি অত্যাচার বন্ধে জনপ্রতিনিধিদেরও বলা হয়েছে।