নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করার জন্য মৎস্য সম্পদের বহুমুখী ব্যবহারের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
শুক্রবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মৎস্য ভবনে মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১ এর সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, মৎস্যসম্পদের বহুমুখী ব্যবহারের ক্ষেত্র সৃষ্টির জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। শুধু ভাতের সাথে মাছ খাওয়া নয়, মাছ থেকে কী কী পণ্য তৈরি করা যায় সেটা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশে মৎস্য ও মৎস্য জাতীয় জলজ সম্পদ থেকে বিভিন্ন বেকারি পণ্য তৈরি হচ্ছে। মাছ থেকে চিপস, ফিস বল বা অন্যান্য খাবার তৈরি করা যেতে পারে। মাছের বহুবিধ ব্যবহারে মানুষকে আকৃষ্ট করতে হবে। অনেকে স্বাভাবিকভাবে মাছ খায় না কিন্তু রেস্তোরাঁয় মাছ দিয়ে তৈরি খাবার খেতে চায়। পুষ্টি চাহিদা পূরণে এক প্রক্রিয়ায় মাছ না খেলে মানুষকে অন্য প্রক্রিয়ায় খাওয়াতে হবে। আমরা চাই মাছের বহুমুখী পণ্যের বিকাশ হোক।
দেশের বাইরে থেকে আমদানি করা মৎস্য খাদ্য উপকরণ দেশে তৈরির শিল্প স্থাপনে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসার জন্য এ সময় আহ্বান জানান মন্ত্রী। কর অব্যাহতি সুযোগসহ রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে যে ধরনের সহযোগিতা লাগবে তা দেওয়া হবে বলেও এ সময় আশ্বস্ত করেন তিনি। আমাদের মৎস্যসম্পদ বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কোন অংশে কম নয় উল্লেখ করে দেশের সমুদ্র অঞ্চল, বদ্ধ জলাশয় ও উন্মুক্ত জলাশয়সহ মৎস্য চাষ উপযোগী সব ক্ষেত্রের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য সৃজনশীল কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন মন্ত্রী।
শ ম রেজাউল বলেন, মৎস্য খাতের যেকোনো সমস্যা সমাধানে সরকারের পক্ষ থেকে যা কিছু করণীয় সেটা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান তার সরকার আমলে মৎস্য খাত বিকশিত হোক। সেজন্য তিনি এ খাতে সব সহযোগিতার দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। মৎস্যজীবী নয় এমন মানুষের কার্ড বাতিল করে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের কার্ড দেওয়া এবং তাদের কাছে যথাযথভাবে সরকারি সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে পূর্বের চেয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করে আমরা কাজ করছি।
‘বিদেশে মৎস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থে রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। যাতে কোনো রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান জাল সনদ অথবা রাসায়নিক মিশ্রিত মৎস্য রপ্তানি না করে। মৎস্য খাতে কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে ভালো কাজ করা ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাদের বিরুদ্ধে তথ্য দিলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ খাতে ভালো কাজ করা ব্যক্তিদের আমরা সহযোগিতা করতে চাই’, বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, মৎস্য খাত সংশ্লিষ্টদের উদ্বুদ্ধ করা, উচ্ছ্বসিত করা ও কাজে সম্পৃক্ত করা, এ খাতের প্রতি জনগণকে আগ্রহী করে তোলা এবং এ খাতের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের মাধ্যমে খাতটিকে গতিশীল করার জন্য প্রতি বছর মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন করা হয়। পাশাপাশি এ খাতে উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করাও মৎস্য সপ্তাহের অন্যতম লক্ষ্য। করোনায় সৃষ্ট বেকারত্ব দূর করতে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ একটা ক্ষেত্র হতে পারে। এ কারণে এ বছর মৎস্য সপ্তাহে বিষয়টিকে প্রতিপাদ্য হিসেবে রাখা হয়েছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী শামস আফরোজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য ও জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২১ উদযাপনের সাথে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের বাস্তবায়িত কার্যক্রম তুলে ধরেন মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক (অভ্যন্তরীণ মৎস্য) আজিজুল হক।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ, মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগের উপপরিচালক মো. আনিছুর রহমান তালুকদার, যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান, ফিড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ এর সদস্য সচিব মো. আহসানুজ্জমান, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমানউল্লাহ, আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি সাইদুর রহমান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ২০৪১ সালের মধ্যে মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ করার প্রত্যয়ের কথা জানান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শ্যামল চন্দ্র কর্মকার ও মো. তৌফিকুল আরিফসহ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মাঠ পর্যায়ের মৎস্য কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন।
বিএসডি/এমএম