ইব্রাহিম প্রামাণিক
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন ছদ্মবেশী বাকশাল চলছে। সাংবাদিকরাও আজ সেন্সর করে নিউজ করছে। অন্যায় অবিচার ও দুর্নীতির দৃষ্টি অন্যদিকে নিতে পরিমনি ইস্যু দিয়ে মিডিয়াকে ব্যস্ত রাখা হচ্ছে। পরিমনিকে কেনো বারবার রিমান্ড নেয়া হয় তার বিরুদ্ধে নিম্ন আদালতের বিরুদ্ধে রোল জারি করে উচ্চ আদালত। যখন আমাদের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিনা দোষে বিনা ওয়ারেন্টে আটক করে লাগাতার রিমান্ডে নেয়া হয়, তখন তার বিরুদ্ধে রোল জারি হয় না। অর্থাৎ কেউ স্বাধীন নয়। কারো কোনো স্বাধীনতা নেই।
আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুরুল হক হলে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমেদের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন সাবেক মন্ত্রী ও জাপার একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
বিএনপি মহাসচিব প্রয়াত কাজী জাফরের স্মৃতিচারণ করে বলেন, কাজী জাফর একটি ইতিহাস। কলেজ জীবনে তার বক্তব্য শুনে আমরা ঘরে থাকতে পারিনি। অধিকার আন্দোলনে কাজী জাফরের ভুমিকার বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ১৯৬৬, ৬৯ ও ৭১ আর ২০২১ সাল এক নয়। নতুন বিশ্বকে আমাদের বুঝতে হবে। শাসকগোষ্ঠী পাল্টিয়েছে। ধরণ পাল্টিয়েছে। একটি গণতান্ত্রিক দলের পক্ষে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করা সম্ভব নয়। সকলের মাঝে আজ হতাশা বিরাজ করছে, কেনো? আ’লীগ ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসেছে। এরশাদকেও নয় বছর শাসন করার পর বিদায় নিতে হয়েছে। এই বর্তমান বাকশালি শাসকগোষ্ঠীকেও বিদায় নিতে হবে। তবে একটু অপেক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আজ কেনো জিয়ার লাশ নিয়ে কথা বলছে। কারণ তারা দেউলিয়া হয়ে গেছে। আজকে বিষয় হচ্ছে টিকা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজকে বলছে দশ লাখ টিকা আসবে। কালকে বলছে আজ আসবে না, কাল আসবে। টিকা নিয়ে চলছে ধোঁকাবাজি। আসল বিষয়টি হলো কমিশন। যেখানে বেশি কমিশন পাওয়া যায়, সেদিকেই ধুকছেন। ৪ ভাগ মানুষকেও এখন টিকার আওতায় আনতে পারেনি। সরকার লকডাউন দিয়ে তা কার্যকর করতে পারে না। কারণ, মানুষের ঘরে খাবার নেই। দেননি প্রণোদনা। যেটা দিয়েছেন সেটা লুটের জন্য। হাজার কোটি টাকা বিলি করলেও তা পেয়েছে ক্ষমতাসীনদলের নেতাকর্মীরা। এসব লুটপাটের ঘটনা অন্যদিকে দৃষ্টি ফেরাতেই বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসছে।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ৭০ সালেও ৪০ পয়সা ধরে চাল খাওয়াবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো। পরে ৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে গেলেন। আত্মসমর্পণ করলেন। আমরা পালিয়ে যাইনি, যুদ্ধ করেছি।
তিনি বলেন, কৃষক নায্যমূল্য পাচ্ছে না। করোনায় থাবায় চাকুরী হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। সরকারের এই দিকে কোনো দৃষ্টি নেই। ফখরুল বলেন, দেশ আজ মহাসংকটে। এই সংকট কোনো ব্যক্তির নয়, গোটা জাতির। দেশ আজ অস্তিত্ব বিলীন হতে চলছে। এ সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে ততদিন এদেশ ক্ষয় হতে থাকবে। মির্জা ফখরুল বলেন, সীমান্ত ক্রস করলেই গুলি করে মারা হচ্ছে। ভারতের কাছে তারা বিচার চাইতেই ভয় পায়। ৪ বছরেও রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে পারলো না। কারণ, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি।
তিনি আরো বলেন, কেউ এসে আমাদের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবে না। গণতন্ত্রের মা দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে আমরা আজও মুক্ত করতে পারিনি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। কারণ, ক্ষমতায় আছে দানবীয় সরকার। আমরা চেষ্টা করেছিলাম ২০দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যজোটের সমন্বয়ে দেশে পরিবর্তন আনার। কিন্তু রাতের আঁধারে ভোট ডাকাতি করে করে আমাদের সে চেষ্টা সরকার ভুন্ঠিত করে দেয়। তাই বলে কি আমরা বসে থাকবো?
তিনি বলেন, গণতন্ত্র, মানুষ ও দেশ বাঁচাতে দেশের তরুন সমাজ উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। এদেশের মানুষ কখনো পরাজিত হয় না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া বলেছেন-হতাশ হইনা, জয় আসবেই। স্মরণ সভায় এএসএম শামীমের সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব আহসান হাবিব লিংকন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, এনপিপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান ইরান, জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, নওয়াব আলী আব্বাস, অ্যাডভোকেট মুজিবর রহমান, মাওলানা রুহুল আমিন প্রমুখ।
বিএসডি/এমএম