দুটি দল ‘পিস ডিফেন্ডার’ (শান্তিরক্ষী) ও ‘পিস হিরোজ’ (শান্তির নায়ক) নামে মুখোমুখি হয়। আফগানিস্তান জাতীয় দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় এ ম্যাচে খেলেছেন। কারা খেলেছেন, সেটা সংবাদ সংস্থা এএফপি জানায়নি। তবে ক্রিকইনফো লিখেছে, গুলবদীন নাইব, হাসমতউল্লাহ শহীদি ও রহমত শাহ খেলেছেন।
কাবুল স্টেডিয়ামে তালেবান কমান্ডার হামজা সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘এখানে ক্রিকেট ম্যাচ দেখাটা দারুণ ব্যাপার।’ কাবুল স্টেডিয়ামে দর্শকদের শান্ত রাখা এবং ম্যাচের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত যোদ্ধা দলের নেতৃত্বে ছিলেন হামজা। নিরাপত্তারক্ষীর দায়িত্বে নিয়োজিত যোদ্ধাদের অনেকেই নিজের কাজ ভুলে দর্শকদের চেয়ে বেশি মনোযোগ দিয়ে ম্যাচটা দেখেছেন। হামজাও নিজেকে দাবি করলেন ক্রিকেটার হিসেবে, ‘আমি নিজেও খেলোয়াড়। একজন অলরাউন্ডার।’
১৯৯৬ থেকে ২০০১—এ সময় আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ছিল তালেবান বাহিনী। তখন অনেক খেলাই নিষিদ্ধ ছিল এবং মেয়েদের খেলাধুলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়। মানুষ হত্যার কাজে ব্যবহার করা হতো স্টেডিয়ামগুলো। এবার তালেবান বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর দেশটির জনগণের স্বাভাবিক জীবন–যাপন নিয়ে তাই দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বৈশ্বিক নেতৃবৃন্দ। কাল ঐক্যের ম্যাচে দর্শকদের কাতারে কোনো নারী ছিলেন না। তবে উপস্থিত প্রায় ৪ হাজার দর্শক এবং নিরাপত্তারক্ষীদের মধ্যে উৎসাহের কমতিও ছিল না। ম্যাচটি ছিল টি–টোয়েন্টি।
২০০০ সাল শুরুর আগে আফগানিস্তানে ক্রিকেট নিয়ে তেমন হই–হুল্লোড় ছিল না। খেলাটি সমন্ধে জানতেন না অনেকেই। সে সময় যুদ্ধ চলাকালীন আফগান শরণার্থীরা পাকিস্তানের শরণার্থী শিবিরে খেলাটি শেখেন। তালেবান ক্ষমতা থেকে সরে গেলে ওই শরণার্থীরা দেশে ফেরার পর আফগানিস্তানে ক্রিকেটের জাগরণ শুরু হয়। আফগানিস্তান জাতীয় দলও এ সময় থেকে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এবং এখন যেকোনো প্রতিপক্ষের জন্যই তারা খুব বিপজ্জনক। জাতিগত দাঙ্গা এবং দখল–পুর্নদখলে বিপর্যস্ত আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে সবাইকে একসূত্রে গেঁথেছিল ক্রিকেট।
কালকের ম্যাচে দর্শকেরা আফগানিস্তানের চিরায়ত পতাকা এবং তালেবান পতাকা—দুটোকেই সাদরে করণ করে নেন। ক্রিকেটপ্রেমীরা বিনে পয়সায় মাঠে ঢুকে খেলা দেখেছেন। তবে মাঠে ঢোকার পথে সবার তল্লাশি নিয়েছেন তালেবান নিরাপত্তারক্ষীরা। ম্যাচে পিস ডিফেন্ডাররা ৬২ রানে জেতার পর আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী হামিদ শিনওয়ারি জানান, ইতিবাচক দিক বোঝাতেই দুটো পতাকা পাশাপাশি রাখা হয়। ‘এটা ঐক্যের প্রতীক’—বলেন শিনওয়ারি। তবে আফগানিস্তান নারী ক্রিকেট দলের ভবিষ্যত নিয়ে সন্দেহে আছেন সবাই। অনেক ক্রিকেটারই এর মধ্যে দেশ ছেড়েছেন কিংবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
আফগান নারী জাতীয় দলের এক সদস্য বিবিসিকে এ সপ্তাহে বলেছেন, ‘হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের একটি গ্রুপ আছে। আমরা সেখানে প্রতিদিন নিজের সমস্যা ও করণীয় নিয়ে কথা বলি। আমরা আশা হারিয়েছি।’
বিএসডি/এএ