ইব্রাহিম প্রামাণিক
করোনাভাইরাসে থমকে দাঁড়িয়েছে গোটা বিশ্ব। এ ভাইরাস যেন সভ্যতা আর উন্নত প্রযুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভিন্ন এক পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে আমাদের। সে পৃথিবীর রং মোটেই শুভ্র নয়। সে পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে মৃত্যুর মিছিল। অবশ্য বাংলাদেশ এই ভয়ানক থাবার বাইরে নয়।
মানুষ ক্রমাগত অসহায় হয়ে পড়ছে উন্নত সব চিকিৎসা পদ্ধতি এবং প্রযুক্তির কাছেও। শিক্ষা খাতেও পড়ছে এর বিরুপ প্রভাব। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে রয়েছে সংশয় ও অপেক্ষার ঝড়। সরকার পরিস্থিতির সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েও প্রকৃতির অমোঘ নীতির কাছে বার বার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে, বৃদ্ধি করতে হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মাত্রাও৷
অনলাইন ক্লাসের উপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) হতে ক্লাস নেবার অনুমতি আসলেও পরিক্ষা গ্রহণ ও সেমিস্টার ফাইনাল গ্রহণে রয়েছে কিছু বিশেষ বাধ্য বাধকতা৷ শিক্ষার্থীদের সাথে সম্পৃক্ত থাকতেই বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নেবার সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে৷ অবশ্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এ দৌঁড় প্রতিযোগিতায় অনেকটা এগিয়েই রয়েছে৷ অনলাইন ক্লাস, পরিক্ষা, প্রেজেন্টেশন এমনকি সেমিস্টারও পার হচ্ছে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ প্রযুক্তির কল্যাণ অস্বীকার না করা গেলেও তার যথার্থ ব্যবহার এবং গভীর বিশ্লেষণ নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনার ঝড়৷
সংক্রমণ হারের ঊর্ধ্বগতি থাকার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অনেকবার দিন-তারিখ দেওয়া হলেও একবারের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হয়নি। সরকার সর্বশেষ লকডাউন খুলে দেওয়ার পর থেকে করোনা পরিস্থিতি এখন নিম্নমুখী।
করোনাকালীন দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হতাশা এক রকম। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হতাশার গল্প একেবারে ভিন্ন। যদিও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গত বছর এপ্রিল মাস থেকে অনেক রকমের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। আমরা জানি অনলাইন শিক্ষা নিতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ দূর্বল ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের মধ্যে আছেন। করোনার শুরু থেকেই তাদের অনেকেরই অর্থের অভাব থাকাতে ঢাকাতে থাকার জায়গা হয়নি। অনেকের টিউশনি চলে গেছে। পরে তাদের গ্রামে ফিরে যেতে হয়েছে। করোনাকালীন দেশে বেকার গ্রাজুয়েটের সংখ্যা অনেক বেড়েই চলেছে। সব মিলিয়ে একটা হতাশা, অবসাদগ্রস্ততা এবং অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
করোনার দীর্ঘ এই অবসরের পর সকল সংকটকে পিছে ফেলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেবার এই দৌঁড় প্রতিযোগিতায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রস্তুতি কতটুকু জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক সাজ্জাদ হোসাইন ‘দৈনিক বর্তমান সময়” কে জানান, দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থী নানা সমস্যার সম্খীন হচ্ছে। আমি মনে করি বিশ্ববিদ্যালয় অক্টোবরে খুলে দিলে ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে এবং শিক্ষার প্রসারে খোলাটা অত্যান্ত জরুরি এবং ক্যাম্পাসে আবার সেই আগের রূপ ফিরে পাবে (১৫ই অক্টোবর) যদি ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হয়। দেশের অন্য সকল ইউনিভার্সিটির সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সকল কর্মকর্তা কর্মচারী নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন। আশা করছি নির্ধারিত সময়ের মাঝেই আমরা প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নিয়ে ইউনিভার্সিটি খুলে দিতে পারব।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ব্যাপারে তিনি বলেন, সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে মাস্ক স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং দূরত্ব বজায় রেখে ব্যক্তি সচেতন ভাবে করা উচিত।
শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যারা টিকা নিতে ইচ্ছুক তাদেরকে অফিসিয়ালি/আন-অফিসিয়ালি ভাবে বনানী ক্যাম্পাসে সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া টিকা সংক্রান্ত কোন জটিলতা দেখা দিলে আমাদের অবহিত করলে দ্রুত পদক্ষেপ নিব। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক কর্মচারী প্রথম ডোজ টিকা শেষ করেছেন আবার অনেকেই দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছেন।
দীর্ঘদিন পর স্বশরীরে পাঠদানের ক্ষেত্রে কেমন পরিবর্তন আসতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ক্যাম্পাস খোলার পর পুরোপুরি ভাবে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে এবং পুনরায় আগের রূপে সব ফিরে আসবে। তবে সে ক্ষেত্রে সকল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সহযোগিতা এবং আনন্দের সাথে এগিয়ে নিতে চাই। মহামারির কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে যতটা ক্ষতি হয়েছে তার অনেকটাই আমরা কাটিয়ে তুলতে সক্ষম হব।
এ বিষয়ে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুম সিদ্দিকা জানান, বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন ,দীর্ঘদিন যাবৎ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ঘরে বসে সময় পার করতে হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর স্ব-শরীরে ক্লাস করলে যতটা মনোযোগী হবে অনলাইনের ক্লাস গুলোতে ততটা মনোযোগ আসবে না। অনলাইন ক্লাস গুলো মানসিক চাপ মনে হয়। যে কারণে পিছিয়ে পড়ছে প্রান্তিক শিক্ষার্থীরা। এভাবে আর কত দিন?
দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী মধ্য অক্টোবর (১৫ অক্টোবরের পর থেকে) নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় খুলতে পারবে। তবে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের টিকা ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া ও না দেওয়ার পূর্ণাঙ্গ চিত্র জানাতে হবে।
বিএসডি/আইপি/এমএম