নিজস্ব প্রতিবেদক,
চট্টগ্রাম পুরাতন সার্কিট হাউজে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত জাদুঘর সরিয়ে ফেলা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসান।
রোববার চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে বেতার ও তথ্য মন্ত্রণালয়াধীন অধিদপ্তরসমূহের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি একথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জিয়াউর রহমান ছিলেন গুপ্তঘাতক, পাকিস্তানের দালাল। রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত কোন জাদুঘর জিয়ার নামে থাকতে পারে না। তাই চট্টগ্রাম পুরাতন সার্কিট হাউজে জিয়ার নামে চলা যাদুঘর সরিয়ে ফেলা হবে। সেভবনকে পুনরায় সার্কিট হাউজে পরিণত করা হবে।”
গত ২৮ মে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ ও যুব বিদ্রোহের স্মৃতি বিজড়িত পুরাতন সার্কিট হাউজে ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর চট্টগ্রাম’ এর অংশ হিসেবে ঘোষণা করতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানান স্থানীয় সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
এরআগেও ২০১৯ সালে নওফেল এই দাবি জানানোর পর ছাত্র ফোরাম নামের একটি সংগঠন জাদুঘরের নামফলকে জিয়ার নাম কালি দিয়ে ঢেকে দিয়েছিল।
রোববার অনুষ্ঠানে ড. মুরাদ হাসান বলেন, “চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র হতে তৎকালীন চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ভোরে যে যন্ত্র হতে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা পুনরায় পাঠ করেছিলেন, সে যন্ত্রটি জিয়া স্মৃতি জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।“সে যন্ত্রটিকে পুনরায় কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে নিয়ে যথাস্থানে পুন:স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত রয়েছে।”
শতবর্ষী চট্টগ্রামের প্রথম সার্কিট হাউজে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাতে একদল সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতা আসার পর ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর এখানে জিয়া স্মৃতি জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।
নগরীর কালুরঘাটে স্থাপিত ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ থেকে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ রাতে চট্টগ্রামের তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নানের কণ্ঠে ঘোষিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
একাত্তর সালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম, বিশেষ করে স্বাধীনতার ঘোষণায় ব্যবহৃত মাইক্রোফোন, টেবিল, চেয়ার, রেডিও কনসোল, মূল ট্রান্সমিটারসহ অন্যান্য সরঞ্জাম কালুরঘাট থেকে সরিয়ে চট্টগ্রামের পুরাতন সার্কিট হাউজ এলাকায় ‘জিয়া স্মৃতি জাদুঘর’ এ নিয়ে রাখা হয়।
এসব সরঞ্জাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্রে ফিরিয়ে নিয়ে সংরক্ষণের দাবি জানিয়ে আসছেন বেতার কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
জাদুঘরটিতে জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন নমুনা, তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের সামগ্রী এবং কিছু চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে।
রোববারের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বেতার চট্টগ্রাম কেন্দ্রের আঞ্চলিক পরিচালক এস এম মোস্তফা সারোয়ার, চট্টগ্রাম পিআইডির উপ-প্রধান তথ্য অফিসার মীর হোসেন আহসানুল কবীর, সিনিয়র তথ্য অফিসার মো. আজিজুল হক নিউটন, জেলা তথ্য অফিস চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মো. সাঈদ হাসান, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়াসহ বেতারের কর্মকর্তরা উপস্থিত ছিলেন।এরআগে সকালে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এই কেন্দ্রের ১০ একর জায়গা হতে সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনকে (বিএফডিসি) ১ দশমিক ৩০ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিমন্ত্রী বরাদ্দ হওয়া জমিটি পরিদর্শন করেন।
পরে কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারী ও সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান বলেন, “এফডিসির চট্টগ্রাম কেন্দ্র নির্মিত হলে এখান থেকে বাংলা সংস্কৃতির ধারক ও বাহক সিনেমা নির্মিত হবে। এ কেন্দ্রে নতুন সিনেমার শুটিং হবে। ফলে নতুন নতুন মেধাবী পরিচালক, শিল্পী ও কলাকুশলী তৈরি হবে। বাংলা সংস্কৃতির অঙ্গন সমৃদ্ধ হবে।”
এসময় এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো. মফিজুর রহমান, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ডা. ইসমাইল খান, বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের জিএম নিতাই কুমার ভট্টাচার্য ছিলেন।
বিকেলে প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান নগরীর চশমা হিলে সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর কবরে ফুল শ্রদ্ধা জানান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত আতাউর রহমান খান কায়সার এর কবরেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বিএসডি/এএ