নিজস্ব প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, সামনের ৬ মাস বেশ কঠিন সময়। অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এই ৬ মাস খুবই ভয়াবহ হতে পারে। তাই এখন আমাদের একটাই টার্গেট শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তাকে নিরাপদ রাখতে হবে। কারণ আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু প্রধানমন্ত্রী না, তিনি আমাদের কাছে আমাদের বিকল্প মা।
সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাব মিলনায়তনে মহানগর আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় ২৭টি ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি এসব কথা বলেন।
শামীম ওসমান আরও বলেন, যদি মনে করেন নৌকা পেলেই আপনি পাস করে ফেলবেন তাহলে বড় ভুল করছেন। আগে দেখতে হবে জনগণ আপনাকে চায় কিনা, দলের নেতাকর্মীরা আপনাকে চায় কিনা। তারপর দল চিন্তা করবে আপনি নৌকা পাওয়ার যোগ্য কিনা।
তিনি বলেন, সামনে সিটি করপোরেশন নির্বাচন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আসছে। জনগণের ভালোবাসা নিয়েই সবাইকে মাঠে নামতে হবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম তাদেরকেই লড়াই করতে হবে। এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়। সেই যৌবন যাদের আছে তাদের আহ্বান জানাই। আপনাকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ করার দরকার নাই। করোনার কারণে অনেক দিন রাজনীতির চর্চা নেই তাই সবাই কাজ শুরু করেন। যার যার এলাকা থেকে কাজ শুরু করেন। সবাই মিলে কাজ শুরু করেন। ভাড়া করা লোক আনবেন না। কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন, পরামর্শ নেন।
অভ্যন্তরীণ কোন্দল করবেন না। কে বড়, কে ছোট দেখবেন না। আমরা একটা পরিবার। যতক্ষণ নিশ্বাস আছে দলের জন্য, শেখ হাসিনার জন্য, দেশের মানুষের জন্য যেন কাজ করতে পারি। দোয়া করবেন। এ কারণে আগামী অক্টোবের শুরুতে একটি বড় সমাবেশ করব। এর আগে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে আমরা কর্মী সভা করব। ২৭টি ওয়ার্ডে কর্মী সভা করব। আমিও পরে সবগুলো ওয়ার্ডে যাব। এরপর আমরা রাস্তায় নামব। রাস্তার শ্রমিক রিকশাওয়ালা হকারদের জানাব আমরা তোমাদের সঙ্গে আছি। আমার কোনো আলিশান বাড়ির মালিককে দরকার নাই। এটা করতে হবে আমাদের ক্ষমতার জন্য না বরং দেশের স্বার্থে। আমি অনেক কিছু বলতে পারছি না। কিন্তু ভেতরে যা হচ্ছে তা খুবই ভয়ঙ্কর।
শামীম ওসমান বলেন, আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু প্রধানমন্ত্রী না, তিনি আমাদের কাছে আমাদের বিকল্প মা। তাই তাঁর সঙ্গে কথা বললে অধিকার নিয়ে কথা বলি। আমরা যখন তাঁর সঙ্গে একদিন বসেছিলাম তখন তিনি আমাদের বলেছেন, ‘শামীম আমি হলাম নীলকণ্ঠী। আমি বিষ খেয়েও হজম করতে পারি।’ তাঁর সেই কথা আমি অনুসরণ করি। নেত্রী যদি সব হজম করতে পারেন তাহলে আমরা কর্মীরা কেন পারব না। কিন্তু এত বিষ হজম করতে হবে সেটা বুঝি নাই। শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বক্তব্য দেয় একজন শোনে পাঁচজন। তাদের কেউ কেউ আমাকে খুনি বলতাছে কেউ ওমুক বলতাছে। এসব এখন আর গায়ে লাগে না।
তিনি বলেন, আমার বাবা মা ভাইয়ের কবরে শ্মশানের মাটি দেওয়া হয়েছিল। এতে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম। আমি গাড়িতে বসে কেঁদেছিলাম। আমি আশা করেছিলাম আমাকে ফোন করে বলবেন, ভাই বিষয়টা আমি দেখছি। কিন্তু সেটাও হয়নি। ঘটনার পরদিন যখন গেলাম তখন গিয়ে দেখি মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের কবরও মাটি দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। আমি ওই ঘটনায় কষ্ট পেয়েছিলাম। যদি আমি আমার কষ্টের বহিঃপ্রকাশ দেখাতাম, চোখ দিয়ে পানি ঝরাতাম তাহলে নারায়ণগঞ্জে শুধু মাথা দেখা যাবে মাটি দেখা যাবে না। কিন্তু আমি সেটা করি নাই। করলে শয়তানদের জয় হতো।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি চন্দন শীলের সভাপতিত্বে কর্মী সভায় বন্দর, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাসহ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের ২৭টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের দলীয় কাউন্সিলররাও উপস্থিত ছিলেন।
বিএসডি/এমএম