নিজস্ব প্রতিবেদক,
রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি বাড়ায় নদী তীরবর্তী ২১টি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। এ অবস্থায় দীর্ঘ দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, পদ্মা বিধৌত জেলা রাজবাড়ী। এ জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে খরস্রোতা পদ্মা নদী। প্রতি বছরই ভাঙন ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এ অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ। বন্যার কবলে পড়ে নদী তীরবর্তী একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ বছরও বন্যার কবলে পড়েছে ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এদিকে দীর্ঘ দেড় বছর পর বিদ্যালয়ে পাঠদান ঘোষণায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে খুশির আমেজ বিরাজ করছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা আশা করছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পানি নেমে যাবে। না হলে পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সদর উপজেলার বরাট ইউনিয়নের ৬ নং কাঠুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের দোতলা বিশিষ্ট ভবনটি পদ্মা থেকে মাত্র আট মিটার দূরে রয়েছে। পদ্মার পানি বাড়ায় এক মাস ধরে বিদ্যালয়ের চারপাশ ও মাঠে মাজা সমান পানি। এ ছাড়া শ্রেণিকক্ষেও ঢুকে পড়েছে পানি। এ অবস্থায় ওই প্রতিষ্ঠানে পাঠদান কোনোভাবেই সম্ভব না।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কুমার দাশ বলেন, পদ্মার পানি কমতে শুরু করেছে। আশা করছি, ১২ তারিখের আগেই বিদ্যালয় থেকে পানি নেমে যাবে। পানি না নামলে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
চর সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া রহমান বলেন, আমাদের স্কুলটি নদীর পাশে। বন্যায় স্কুলে পানি উঠে গেছে। ১২ তারিখ থেকে স্কুল খুললেও আমরা ক্লাস করতে পারব না।
সুজন শেখ নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলে চর সেলিমপুর স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলটি নদীর পাশে হওয়ায় পানি উঠে গেছে। দীর্ঘ দিন পর স্কুল খুললেও বিদ্যালয়টি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই আমার ছেলেকে স্কুলে যেতে দেবো না। স্কুলটি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর না করা পর্যন্ত আমি তাকে বাসায় পড়াব।
গোপালবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বন্যার পানির কারণে সংশয় রয়েই যাচ্ছে। বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি উঠে গেছে। এ পরিস্থিতির মধ্যেই আমরা বিদ্যালয়ের আশপাশ ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার কাজ শুরু করেছি।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৪১৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ২১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এই পানিবন্দি বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কয়েকটি রয়েছে আবার ঝুঁকিপূর্ণ।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হোসনে ইয়াসমীন করিম বলেন, জেলার ৪১৯টি বিদ্যালয়ের মধ্যে নদী তীরবর্তী ২১টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি ঢুকেছে। আবার কিছু ভাঙনের ঝুঁকিতেও রয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্যার পানি নেমে গেলে ক্লাস শুরু হবে। ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলোতে ক্লাস হবে না।
বিএসডি/আইপি