আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
মঙ্গলবার (০৭ সেপ্টেম্বর) আফগানিস্তানে যে নতুন সরকার গঠন করা হয়েছে, তাকে স্বীকৃতি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে দেশটির তালেবানবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক-সামরিক জোট এনআরএফএ (ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট অব আফগানিস্তান)।
বুধবারের বিবৃতিতে এনআরএফের পক্ষ থেকে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘তালেবান বাহিনী আফগান জনগণের সবচেয়ে বড় শত্রু এবং তাদের সেই শত্রুতার সাম্প্রতিক নজির এই নতুন সরকার।’
‘আফগান জনগণের শত্রুদের গঠিত এই অবৈধ সরকারকে স্বীকৃতি না দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সনির্বন্ধ আহ্বান জানাচ্ছে এনআরএফএ।’
২০২১ সালের মে মাস থেকে আফগানিস্তান দখলের অভিযান শুরু করে তালেবান বাহিনী এবং অবিশ্বাস্য দ্রুততার সঙ্গে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে আফগানিস্তানের ৩৪ টি প্রদেশের মধ্যে ৩৩টিই নিজেদের দখলে নিয়ে আসে।
তারপর গত ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুলের দখল নেয় তালেবান। তবে কাবুল দখলের পরপরই সরকার গঠন করেনি তারা, কারণ তখন পর্যন্ত আফগানিস্তানের একমাত্র প্রদেশ হিসেবে তালেবানদের কব্জায় আসেনি দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জশির।
পাঞ্জশিরের নেতা আহমাদ মাসুদ, আফগানিস্তানের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহের অনুগত বাহিনী এবং আফগান সেনাবাহিনীর তালেবানবিরোধী কয়েক হাজার সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত সামরিক জোট এনআরএফের সঙ্গে এক সপ্তাহের তীব্র লড়াই শেষে সোমবার (০৬ সেপ্টেম্বর) পাঞ্জশিরে নিজেদের পতাকা ওড়াতে সক্ষম হয় তালেবান বাহিনী।
তালেবান যদিও দাবি করেছে যে, পাঞ্জশির তাদের দখলে এসেছে, কিন্তু এনআরএফএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তালেবানদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তারপর মঙ্গলবার আফাগনিস্তানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে তালেবান। সরকারের প্রধান হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তালেবান বাহিনীর শীর্ষ ধর্মীয় নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা। অন্যান্য নির্বাহী সদস্যের মধ্যে রয়েছেন- মোল্লা মোহাম্মদ হাসান আখুন্দ (প্রধানমন্ত্রী), সিরাজউদ্দিন হাক্কানি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), আব্দুল গনি বারাদার (উপ প্রধানমন্ত্রী), এবং মোহাম্মদ ইয়াকুব (প্রতিরক্ষামন্ত্রী)।
তালেবানের এই মন্ত্রিসভায় কোনো নারী সদস্যের স্থান হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক তালেবান মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, আফগানিস্তান সরকারের যে নারী বিষয়ক মন্ত্রণালয় আছে, সেটি বর্তমানে নামেমাত্র চালু থাকলেও খুব দ্রুতই এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে।
ওয়াহাবি মতাদর্শে বিশ্বাসী কট্টর ইসলামপন্থি তালেবানগোষ্ঠী আফগানিস্তানে প্রথম দফায় সরকার গঠন করেছিল ১৯৯৬ সালে। সে সময় নারীশিক্ষা ও নারীদের চাকরি ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল আফাগানিস্তানে।
মঙ্গলবার যখন তালেবান সরকার ঘোষণার চুড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে, তখন কাবুলে নারীদের একটি বিক্ষোভ মিছিল বেরিয়েছিল। শতাধিক নারী সেই মিছেলে অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু তালেবান সেনারা ফাঁকা গুলি করে তা ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।
একই দিন দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ হেরাতে একটি মিছিল বের করেছিল তালেবান বিরোধীরা। সেখানে গুলি চালিয়েছে তালেবান। এতে অন্তত ৩ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র: বিবিসি