নিজস্ব প্রতিনিধি
আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজ খোলা হচ্ছে। এ বিষয়ে ১১টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে।
যেসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো-
>> আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সব পর্যায়ের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মাদরাসাগুলোর শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষ সার্বক্ষণিক তদারকি করবে।
>> শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের লক্ষ্যে জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে।
>> এ বছর ও আগামী বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এবং প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে। বাকি শ্রেণিগুলোর শিক্ষার্থীদের ক্লাস সপ্তাহে এক দিন করে হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে তা পর্যায়ক্রমে বাড়ানো হবে।
>> এ বছরের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাস কিছু দিন পরেই শেষ হয়ে গেলে নবম ও একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস হবে।
>> পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী এবং অষ্টম শ্রেণির জেএসসি/জেডিসি পরীক্ষার প্রস্তুতি থাকবে। পরিস্থিতি অনুকূল হলে পরীক্ষা নেওয়া হবে।
>> প্রাক-প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের সশরীরে ক্লাস আপাতত বন্ধ থাকবে।
>> যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তা শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
>> বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ব্যবস্থা করতে হবে।
>> কোন স্থানে করোনা সংক্রমণের অবনতি বা বিশেষ অবস্থার সৃষ্টি হলে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন বা শিক্ষা বিভাগকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে।
>> বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলার বিষয়ে সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
>> ১২ বছরের বেশী বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকাদানের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
শিক্ষার্থীদের পদচারণায় আবার মুখরিত হবে স্কুল-কলেজ। ফিরবে শিক্ষকদের পাঠদানের চিত্র, সঙ্গে ফিরবে পড়াশোনার ব্যস্ততা।
২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। ওই বছরের ১৭ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। এরপর দফায় দফায় বাড়তে থাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি।
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের শিক্ষা কার্যক্রমে গতি আনতে নানা পদক্ষেপ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে তাতে তেমন গতি ফেরেনি। এর মধ্যেই বাতিল কিংবা স্থগিত হয়ে যায় নানা স্তরের পরীক্ষা। ২০২০ সালের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা বাতিল করা হয়।
গত বছরের পরীক্ষা না নিয়েই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফল এ বছরের জানুয়ারিতে ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পরের শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হয়। তবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আওয়াজ জোরালো হচ্ছিল। এরমধ্যেই আজ রোববার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানালেন আগামী ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে। রোববার সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা শেষে এ তথ্য জানান মন্ত্রী।
এর আগে, ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠান শেষে দীপু মনি ঘোষণা করেন ১২ সেপ্টেম্বর থেকে সারাদেশে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মাস্ক পরা ছাড়া কেউ শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করতে পারবে না। শিক্ষার্থী, শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। একেবারে কমবয়সী যারা, তাদের কোনো সংকট হচ্ছে কি না, তা শিক্ষকদের খেয়াল রাখতে হবে।
মন্ত্রী জানান, প্রাথমিকের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ, সপ্তম, নবম শ্রেণির ক্লাস হবে সপ্তাহে এক দিন। শুরুতে চার ঘণ্টা করে ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে সব শ্রেণির ক্লাসের সময় বাড়ানো হবে।
২০২১ এবং ২০২২ সালে যারা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দেবে, তারা প্রতিদিন ক্লাস করবে বলেও জানান মন্ত্রী। দীপু মনি বলেন, শুরুর দিকে চার ঘণ্টা করে ক্লাস হবে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে।
বিএসডি/এমএম