আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
নারীরা মন্ত্রী হতে পারবে না, তাদের কাজ সন্তান জন্ম দেওয়া। তালেবানের মুখপাত্র এক সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন। তার এমন মন্তব্য এই ধারণাকেই আরও শক্তিশালী করছে যে, ১৯৯০-এর দশকে কঠোর শরিয়া আইনে আফগানিস্তান শাসন করা কট্টর এই ইসলামি গোষ্ঠী এবার যে পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছিল তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
তালেবান রাষ্ট্রক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। সেই সরকারে কোনো নারী নেই। এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তালেবানের মুখপাত্র সাঈদ জাকরুল্লাহ হাশিমি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজকে এমনটাই বলেছেন। তার এই বক্তব্যের ভিডিও ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।
তোলো নিউজকে তালেবান মুখপাত্র বলেন, ‘একজন নারী মন্ত্রী হতে পারে না। এটা এমন যে, আপনি তার গলায় কিছু একটা ঝুলিয়ে দিলেন, যার ভার সে বহন করতে পারে না। মন্ত্রিসভায় নারী থাকার কোনো প্রয়োজন নেই। তাদের কাজ হওয়া উচিত সন্তান জন্ম দেওয়া। বিক্ষোভরত নারীরা সব আফগান নারীরা প্রতিনিধিত্ব করে না।’
আফগানিস্তানের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা তো তাদের অর্ধেক মনে করি না। কোন অর্ধেকের কথা বলছেন? অর্ধেককে এখানে ভুলভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অর্ধেক মানে আপনি তাদের মন্ত্রিসভায় রাখেন আর কিছু নয়। আপনি যদি তার অধিকার হরণ করেন, সেটাও বিষয় নয়। গণমাধ্যম যাই বলুক গত ২০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পুতুল সরকারে যা হয়েছে তা কি অফিসে পতিতাবৃত্তি ছাড়া কিছু ছিল?’
সব নারীকে পতিতাবৃত্তির অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে তালেবান মুখপাত্র সাঈদ জাকরুল্লাহ হাশিমি বলেন, ‘আমি সব আফগান নারীর কথা বোঝাইনি। যে চার-পাঁচজন নারী রাস্তায় বিক্ষোভ করছে তারা আফগানিস্তানের সব নারীর প্রতিনিধিত্ব করে না। আফগান নারী তারাই যারা আফগানিস্তানের জন্য সন্তান জন্ম দিয়ে তাদের ইসলামি আইন অনুযায়ী নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলে।’
কেন একজন নারী মন্ত্রী হতে পারবেন না তা জানতে চাওয়া হলে তিনি আরও বলেন, ‘নারীরা সাধারণত যা করে থাকে, তাতে সে একটি মন্ত্রণালয় চালানোর যোগ্যতা রাখে না।’ উল্লেখ্য, তালেবান আফগানিস্তানে পুরুষ-সর্বস্ব সরকারের ঘোষণা দেওয়ার পর রাজধানী কাবুলসহ আফগানিস্তানের বিভিন্ন অংশে নারীরা বিক্ষোভ করছধাক
পুরুষ-সর্বস্ব তালেবান সরকার গঠনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন আফগান নারীরা। বিক্ষোভকারী কিছু নারী নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় নারী মন্ত্রী অন্তর্ভূক্ত করার দাবি তোলেন। তবে ওইদিনের বিক্ষোভগুলোও ছত্রভঙ্গ করে দেয় তালেবান। অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভরত ওই নারীরা বেধড়ক মারধরেরও শিকার হয়েছেন।
তালেবানের নিষ্ঠুর শাসনের ভয় তৈরি হয়েছে আফগানিস্তানজুড়ে। তালেবানের আগের শাসনামলে নারীদের শিক্ষা ও চাকরির অধিকার ছিল না। তারা পুরুষসঙ্গী ছাড়া একা বাড়ি থেকে বের হতে পারতেন না। তালেবান ক্ষমতায় এসেই জাতীয় ক্রিকেট দলসহ আফগানিস্তানে নারীদের সব খেলায় নিষেধাজ্ঞার কথা জানিয়েছে।
তালেবানের প্রধান ও সর্বোচ্চ নেতা হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদাও বলেছেন, ‘আমি দেশবাসীকে নিশ্চিত করতে চাই ইসলামিক আইন বাস্তবায়নে কঠোর পরিশ্রম করবে সরকার। ভবিষ্যতে আফগানিস্তানের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে শরিয়া আইনে।’ তার কাছ থেকে এমন বক্তব্য আসার পর নারীদের মধ্যে শঙ্কা আরও বেড়েছে।