আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
তালেবানের ‘ঘরে থাকার নির্দেশ’ উপেক্ষা করে আফগানিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন অসংখ্য মানুষ। বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছেন নারীরাও। তবে বিক্ষোভ দমনে নির্যাতন ও শক্তিপ্রয়োগের অভিযোগও উঠেছে তালেবানের বিরুদ্ধে। এরপরই তালেবানের এমন ক্রমবর্ধমান সহিংস প্রতিক্রিয়া ও কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘ।তা
এছাড়া সাম্প্রতিক আন্দোলন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া আফগানদের মধ্যে তালেবান যোদ্ধারা চারজনকে হত্যা করেছে বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ। শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত ১৫ আগস্ট তালেবান কাবুলের দখল নেওয়ার পর থেকে আফগানিস্তানের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। এসময় বিক্ষোভকারীরা নারী অধিকার নিশ্চিত করাসহ মানুষকে আরও বেশি স্বাধীনতা দেওয়ার দাবি জানান।
এক প্রতিবেদনে জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীদের দমনে লাঠি ও চাবুক ব্যবহারের পাশাপাশি সরাসরি গুলিবর্ষণও করেছে তালেবান যোদ্ধারা। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের মুখপাত্র বলেন, ‘বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে শক্তিপ্রয়োগ বন্ধ করতে আমরা তালেবানের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এছাড়া অধিকারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করা মানুষকে এবং দায়িত্বরত সাংবাদিকদের নির্বিচারে আটক করাও বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে তালেবানের দমন-পীড়নের তীব্র সমালোচনা করেছেন জাতিসংঘের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি। তিনি বলেন, গত ১৫ আগস্ট থেকে দেশটিতে বিক্ষোভ হচ্ছে। কিন্তু গত বুধবার অনুমতি ছাড়া যেকোনো ধরনের বিক্ষোভ আয়োজন নিষিদ্ধ করে তালেবান। এছাড়া এর পরদিন কাবুলে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দিতে টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেয় তারা।
এদিকে সাংবাদিকদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের নিন্দাও জানিয়েছে জাতিসংঘ। তালেবানের মারধরে আহত সাংবাদিকদের মর্মপীড়াদায়ক কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর আফগানিস্তানের কট্টর ইসলামপন্থী এই গোষ্ঠীর শাসনকালীন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মানবাধিকার রক্ষা, বাক-স্বাধীনতা এবং অতীতের মতো এবারের শাসন হবে না বলে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তালেবান, সেসব এই গোষ্ঠী আদৌ রক্ষা করতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।
তালেবানের নতুন সরকার গঠনের পর নিজেদের অধিকারের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন দেশটির অনেক নারী। এই বিক্ষোভের সংবাদ প্রকাশ করায় আফগানিস্তানের অন্তত দু’জন সাংবাদিককে বেধড়ক মারপিটের পর হাসপাতালে পাঠিয়েছে তালেবানের সদস্যরা। তালেবানের মারধরে আহত দুই সাংবাদিকের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার অনেকে সমালোচনা করছেন।
ছবি দু’টির সত্যতা নিশ্চিত করেছে আফগানিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এতিলাত্রোজ ও যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস টাইমসের প্রতিবেদক মারকাস ইয়াম। মারকাস ইয়ামের টুইট করা ছবিতে দেখা যায়, স্থানীয় দুই সাংবাদিকের অন্তর্বাস ছাড়া সব পোশাক খুলে ফেলা হয়েছে। তাদের পিঠ এবং পায়ে অসংখ্য মারপিটের দাগ। তালেবানের বেধড়ক মারপিটে রক্তাক্ত ও কালো হয়ে গেছে তাদের শরীর।