ক্রীড়া ডেস্কঃ
তার জমানায় দেশের ফুটবল যে পথেই হাঁটুক, জাতীয় দল নিয়ে আন্তরিকতার কমতি ছিল না কাজী সালাউদ্দিনের। বিদেশি কোচ এনে, ভালো জায়গায় রেখে, ভালো সুযোগসুবিধা দিয়ে, দেশে-বিদেশে খেলিয়ে নানাভাবেই জাতীয় দলের উন্নতি চেয়েছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের টানা চতুর্থ মেয়াদের সভাপতি। তবে তাদের চেষ্টার সুফল সেভাবে মেলেনি। জাতীয় দলের পারফরম্যান্সে সেভাবে উন্নতি দেখা যাচ্ছে না। বরং এক সময়ে দুর্বল অথবা সমকক্ষরাও শক্তি-সামর্থ্যে পারফরম্যান্সে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের চেয়ে। সালাউদ্দিন দক্ষিণ এশিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (সাফ) সভাপতির দায়িত্বেও আছেন বহুদিন। অথচ কাক্সিক্ষত সাফ শিরোপা একবারও নিজের দলের হাতে তুলে দিতে পারেননি। সাংগঠনিক ক্যারিয়ারে এটা সালাউদ্দিনের বহুদিনের আক্ষেপ। আরেকটা সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে, তার আগে জাতীয় দল নিয়ে আরেকবার হতাশা প্রকাশ করলেন বাফুফে সভাপতি। সাফের প্রস্তুতির জন্যই কিরগিজস্তানে তিনটি ম্যাচের আয়োজন করে দিয়েছিলেন। অনেক আশা নিয়ে কিরগিজস্তান গিয়েছিলেন দলকে ভালো খেলতে দেখবেন বলে। কিন্তু সেই আশা অপূর্ণ থেকেছে। র্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ফিলিস্তিন, কিরগিজস্তানের কাছে হারার পর স্বাগতিক অনূর্ধ্ব-২৩ দলের কাছেও হারের বৃত্তে ঘুরপাক খেতে দেখেছেন দলকে। তারপর দেশে ফিরে বলেই দিলেন দলের পারফরম্যান্সে খুশি নন।
অথচ কতটাই আস্থা রেখেছিলেন বর্তমান খেলোয়াড়দের ওপর। তার দাবি ৫০ বছরের সেরা ফুটবলারদের নিয়ে গড়া এই জাতীয় দল। বর্তমানকে অনুপ্রাণিত করতে নিজেদের উজ্জ্বল অতীতকেও অস্বীকার করেছেন দেশের সবচেয়ে বড় এই তারকা। বলেছেন তাদের চেয়ে এই জাতীয় দল অনেক ক্ষমতা রাখে। তো, যাদের ওপর এতটাই আস্থা তারা কেন বারবার সালাউদ্দিনকে হতাশ করছেন? এমন প্রশ্ন সালাউদ্দিনের মনেও। কিরগিজস্তান থেকে ফিরে আরও অনেক প্রশ্ন নিয়ে বসে আছেন। অচিরেই ডাকবেন ইংলিশ কোচ জেমি ডে-কে। জানতে চাইবেন দলের কেন এই দুর্দশা। তার আগে সংবাদমাধ্যমে ঢালাওভাবে কিছু বলতে চান না সালাউদ্দিন, ‘এক কথায় শুধু বলব, দলের পারফরম্যান্সে আমি একদমই খুশি নই। আমার বেশ কিছু জিজ্ঞাসা আছে কোচের কাছে। তার সঙ্গে কথা বলেই আমি সব মিডিয়ার সামনে আমার প্রতিক্রিয়া দেব। কোচের সঙ্গে কথা না বলে যদি আমি কোনো বিবৃতি দিই, সেটা হয়তো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খেলোয়াড়দের ওপর। সেটা আমি চাই না। তবে আবারও বলছি, ওভারঅল আই অ্যাম নট হ্যাপি।’
সাফের প্রতিপক্ষদের চেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার সুযোগ করে দিয়ে সালাউদ্দিন আসলে দেখতে চেয়েছিলেন দলের সামর্থ্য। কিন্তু তিন ম্যাচের কোনোটিতেই উন্নতির সামান্য ইঙ্গিত রাখতে পারেনি দল। খেলোয়াড়রা অবশ্য এর দায় নিজেদের ওপরই রাখছেন। দলের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার তপু বর্মন দেশে ফিরে যেমন স্বীকার করলেন দলের মধ্যে কিছু একটা মিসিংয়ের কথা, ‘একটা সময় আমাদের হারানো কঠিন হতো। সেটা যে-কোনো প্রতিপক্ষের জন্যই হোক। কিন্তু এবার আমরা আসলে শুধু রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতে যাইনি। কোচ চেয়েছিলেন আমরা যাতে নিজেরাও গোলের চেষ্টা করি। সেটা করতে গিয়ে বেশিরভাগ সময় পারিনি। কোচ তো আসলে সবকিছু করে দেবেন না। আমাদের নিজেদেরও দায়িত্বটা ঠিকঠাক পালন করতে হবে। সেখানে কিছুটা তো ঘাটতি ছিলই।’ তারপরও আশা ছাড়তে চান না তপু, ‘সাফ আসে দু’বছর পরপর। এর জন্যই আমরা অপেক্ষায় থাকি সবসময়। এবারের ফরম্যাটটা অন্যরকম। খেলতে হবে লিগভিত্তিক। আমি তো মনে করি এখানে আমাদের ভালো সুযোগ আছে। র্যাংকিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা দুটি দলের সঙ্গে খেলার যে অভিজ্ঞতা হয়েছে, যে ভুলগুলো আমরা করেছি, সেগুলো যদি বাকি সময়টা শুধরে নিতে পারি, তাহলে সাফে আমরা ভালো করব। আমার মনে হয়, প্রথম দু’ম্যাচ খুব গুরুত্বপূর্ণ। শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ম্যাচে হারানোর পর যদি ভারতকে জিততে না দিই, তবে দেখবেন আমাদের ফাইনালে খেলার সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে।’
জেমি ডে কিরগিজস্তানের ট্রাইনেশন টুর্নামেন্টকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বড় ক্ষেত্র হিসেবেই নিয়েছিলেন। কোচ বুঝেছিলেন এখানে জয়-পরাজয় মুখ্য নয়। বরং দলের সবাইকে বড় মঞ্চে পরখ করে নেওয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য। যে কারণে দলের প্রায় প্রত্যেকেই এই তিন ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন। প্রথম ম্যাচে যেমন দলের পোস্ট সামলানোর দায়িত্ব ছিল অভিজ্ঞ শহীদুল আলম সোহেলের। ফিলিস্তিনের বিপক্ষে সেই ম্যাচে বাংলাদেশ হারে ২-০ গোলে। যার প্রথম গোল খাওয়ার দায় অনেকটাই আছে সোহেলের। তবে পুরো ম্যাচে বেশকিছু ভালো সেভ করেছেন সোহেল। ক্যারিয়ারের পঞ্চম সাফ খেলতে যাওয়ার আগে সোহেল বললেন, ‘কিরগিজস্তানে হয়তো যেমন লক্ষ্য ছিল সেটা পূরণ হয়নি, তবে কোচ কিন্তু সবাইকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন। এটাই বড় কথা। কারণ আমরা সেখানে গিয়েছিলাম সাফের প্রস্তুতি নিতে। অক্টোবরে সাফের আগে যে সময় আছে, কোচ নিশ্চয়ই এটাকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করবেন সেরা দলটাকেই বেছে নিতে। আমি মনে করি, সাফে আমরা ভালো করব কারণ কিরগিজস্তানের তিনটি ম্যাচই আমাদের নিজেদের সম্পর্কে ভালো ধারণা দিয়েছে।’
মালদ্বীপে সাফ শুরু হতে বাকি আছে ১৯ দিন। এই সময়ে লিগের তিনটি খেলায় অংশ নেবে বসুন্ধরা কিংসের ফুটবলাররা। জেমি ডে হয়তো এই সময়টায় অন্যদের নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাবেন। তবে তার আগে সালাউদ্দিনের কাঠগড়ায় জেমি কী ব্যাখ্যা দেন, সেটা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে কিছুদিন।
বিএসডি/এএ