প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চলতি অভিবাসীবর্ষে যুক্তরাষ্ট্রে ৬২ হাজার ৫০০ শরণার্থী গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছেন। উদারনৈতিক ও মানবাধিকার গ্রুপগুলোর ক্রমাগত চাপে অভিবাসনব্যবস্থা সামাল দিতে হিমশিম খাওয়ার মুখেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ ঘোষণা দিলেন। ১ সেপ্টেম্বর থেকে আমেরিকার অভিবাসনবর্ষ শুরু হয়।
৩ মে হোয়াইট হাউসের ঘোষণায় বলা হয়, নতুন অভিবাসনবর্ষ শুরু হওয়ার আগে ৬২ হাজার ৫০০ জনের আশ্রয় অনুমোদনের প্রক্রিয়া সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। আগামী বছর থেকে বার্ষিক শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার করার জন্য অভিবাসন বিভাগ কাজ শুরু করে দিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে বার্ষিক শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা সর্বোচ্চ ১৫ হাজারে সীমাবদ্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে, সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বিপন্ন জনগোষ্ঠীর আমেরিকায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ একদম সীমিত হয়ে পড়েছিল। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ ও শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার কর্মসূচি আলাদা।
বাইডেন গত ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা গ্রহণ করেই বার্ষিক শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা বৃদ্ধি করবেন বলে জানান। পরে দ্রুত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের সীমান্ত পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে ওঠে। প্রতিদিন শিশুসহ নথিপত্রহীন হাজার হাজার লোকের আগমন ঘটতে থাকায় তা সামাল দিতে নতুন প্রশাসনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ফলে, অবকাঠামো থেকে শুরু করে পুরো অভিবাসন বিভাগে পরিবর্তন আনতে হচ্ছে।
রাজনৈতিক আশ্রয়সহ অভিবাসনের অন্য নাজুক এলাকাগুলোয় দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাইডেন প্রশাসনের ওপর উদারনৈতিকদের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে। এপ্রিল মাসের শুরুতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রথমে বলেছিলেন, চলতি বছর শরণার্থী গ্রহণ ১৫ হাজারেই সীমাবদ্ধ রাখবেন। সব সামাল দিয়ে পরের বছর থেকে তা বৃদ্ধি করা হবে।
উদারনৈতিক আইনপ্রণেতা ও মানবাধিকার গ্রুপগুলোর জোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওই ঘোষণার দুই দিনের মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর অবস্থান পরিবর্তন করেন। তখন জানানো হয়েছিল, ১৫ হাজারের সীমাবদ্ধতা উঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে চলতি বছর কতজন শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব হবে, তা তখন উল্লেখ করা হয়নি।
সারা বিশ্বে নানা কারণে রাষ্ট্রহীন লোকজনের সমস্যার কথা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, এসব নিপীড়িত লোকজনের ওপর থেকে আমেরিকা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে না। বিষয়টি আমেরিকার মূল্যবোধের সঙ্গে যায় না বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষ-প্রতিকূলতার কারণে শরণার্থী হওয়া লোকজন আমেরিকায় এসে থাকে। আসার আগে এসব শরণার্থীকে আমেরিকার অভিবাসনপ্রক্রিয়ার নানা যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সীমান্তে উপস্থিত হয়ে বা আমেরিকায় পৌঁছে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চেয়ে অভিবাসনের এই প্রক্রিয়া ভিন্ন।
দীর্ঘ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী ১ সেপ্টেম্বরের আগে ঠিক কতজন শরণার্থীকে আমেরিকায় গ্রহণ করা সম্ভব হবে, এ ব্যাপারে প্রশাসন নিশ্চিত নয়। যদিও প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছেন, লোকবল, অবকাঠামো উন্নয়নসহ অন্যান্য প্রস্তুতি গ্রহণ দ্রুততার সঙ্গে চলছে। আগামী বছর থেকে বছরে ১ লাখ ২৫ হাজার শরণার্থী গ্রহণের লক্ষ্য মাথায় রেখে কাজ চলছে।
শরণার্থী গ্রহণে সর্বোচ্চ সংখ্যা বেঁধে দেওয়া ছাড়াও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকায় নানাভাবে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন। এমনকি করোনা মহামারিকে কাজে লাগিয়েও তিনি আমেরিকায় লোকজনের প্রবেশ নিষিদ্ধ করার প্রয়াস নিয়েছিলেন।
জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা আইনের ‘টাইটেল ৪২’ নামের একটি আইনকে কার্যকর করা হয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আরোপিত ‘টাইটেল ৪২’-এর কারণে জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হবে সন্দেহ হলেই আমেরিকায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। এই আইনের কারণে শুধু দক্ষিণের সীমান্তে গত এক বছরে ৬ লাখ ১৮ হাজারের বেশি অভিবাসীকে আটকে দেওয়া হয় বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে আসে। উদারনৈতিক আইনপ্রণেতাসহ মানবাধিকার গ্রুপগুলো এখনো চালু থাকা ‘টাইটেল ৪২’ অকার্যকর করার জন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে।