ইতিমধ্যে সারা বিশ্ব জেনে গেছে, ২৭ বছরের দাম্পত্য জীবনের ইতি টানছেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটস। তাঁদের এই বিচ্ছেদের ঘোষণা বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানীয় দাতব্য সংস্থা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’–এর জন্য প্রথমে একটা ভূমিকম্পের মতোই ছিল। তবে দুজনই আশ্বস্ত করেছেন, ফাউন্ডেশনের ওপর এই বিচ্ছেদের কোনো প্রভাব পড়বে না। পরে এক বিবৃতিতে ফাউন্ডেশনও জানায়, তাঁরা দুজনেই ফাউন্ডেশনের কো–চেয়ারম্যান ও ট্রাস্টি হিসেবে থাকবেন। অর্থাৎ ফাউন্ডেশনে তাঁরা এক থাকছেন। তবে সম্পত্তির হিসাব–নিকাশ হয়তো এতটা সহজ হবে না।
এর আগে ২০১৯ সালে ২৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটান আরেক মার্কিন ধনকুবের ই–কমার্স জায়ান্ট আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। সে সময় বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিবাহবিচ্ছেদের শর্তের ব্যাপারে একমত হন ম্যাকেঞ্জি বেজোস। জেফ বেজোসের সঙ্গে ডিভোর্সের পর তিনি পান ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সম্পদ। এবার কি তার থেকেও ছাড়িয়ে যাবে গেটসদের বিচ্ছেদ চুক্তি। তা নিয়ে এখনো কোনো কিছু খোলাসা করেননি এই দম্পতি।
এদিকে গেটস ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফাউন্ডেশনের কৌশলগত বিষয়ের অনুমোদন, সব আইনি ইস্যু এবং সংস্থার সামগ্রিক দিকনির্দেশ নির্ধারণের জন্য একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবেন বিল গেটস ও মেলিন্ডা।
দুজনের সম্পদের পরিমাণ
তবে ফাউন্ডেশনের ভবিষ্যৎ জানালেও বিল গেটস ও মেলিন্ডার যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তি কীভাবে ভাগ হবে বা বিচ্ছেদের চুক্তি কী হচ্ছে, সে বিষয়ে এখনো কোনো কথা প্রকাশ করেনি কোনো পক্ষই। বিচ্ছেদের পিটিশন আদালতের কাছে তাঁরা এই বৈবাহিক সম্পর্ক মিটিয়ে ফেলার আবেদন জানান। সেই সঙ্গে বিচ্ছেদ চুক্তি অনুযায়ী ব্যবসায়িক স্বার্থ, দায়বদ্ধতা ও যৌথ মালিকানাধীন সম্পত্তি ভাগ করার বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়ে এখনো কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস যুক্তরাষ্ট্রে বেসরকারিভাবে সবচেয়ে বেশি কৃষিজমির মালিক। ২ লাখ ৪২ হাজার একর কৃষিজমির মালিক তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি অঙ্গরাজ্যে বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের মালিকানায় রয়েছে এসব কৃষিজমি। এর মধ্যে লুইজিয়ানায় ৬৯ হাজার ৭১ একর, আরকানসাসে ৪৭ হাজার ৯২৭ একর ও নেব্রাস্কায় ২০ হাজার ৫৮৮ একর কৃষিজমি রয়েছে। তাঁদের বিচ্ছেদ হওয়ায় এখন এই সম্পত্তির ভাগের বিষয়টি জটিল আকার ধারণ করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া গেটস পরিবারের সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার। তাই বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আপস-রফা হিসেবে মেলিন্ডা কী পাবেন, তা নিয়ে চলছে জল্পনা।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন
১৯৮৭ সালে মাইক্রোসফটে প্রোডাক্ট ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মেলিন্ডা। সে সময় থেকে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একসময় তা প্রেম পর্যন্ত গড়ায়। ১৯৯৪ সালে বিয়ে করেন গেটস ও মেলিন্ডা। বিয়ের ছয় বছর পর তাঁরা যৌথভাবে গড়ে তোলেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে নানামুখী কাজ করছে এই ফাউন্ডেশন। বিশ্বজুড়ে সংক্রামক রোগব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই ও শিশুদের টিকাদানে উৎসাহিত করতে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এ ফাউন্ডেশন প্রায় ৫৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, সচেতন, শিক্ষিত ও স্বাস্থ্যবান একটি বিশ্ব গড়ে তোলা এ সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন প্রতিবছর প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে।
২০০৮ সালে পোলিও প্রতিরোধের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ৬৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার অনুদান দেন বিল গেটস। এর আগে এত অনুদান পায়নি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বর্তমানে মহামারি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ১৫ কোটি ডলারের আর্থিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন। প্রয়োজনে তা ২৫ কোটি ডলারের উন্নীত করার আশ্বাস দিয়েছেন বিল গেটস।
এই ফাউন্ডেশনের অন্যতম দাতা আরেক ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। গত বছর তাঁর প্রতিষ্ঠান বার্কশায়ার হ্যাথওয়ের ২০০ কোটি ডলারের স্টক অনুদান দিয়েছেন তিনি। ১৯৯৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এই ফাউন্ডেশনে ৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার দিয়েছেন গেটস ও মেলিন্ডা দম্পতি। ২০১৯ সালের শেষ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ফাউন্ডেশনের আকার ৪ হাজার ৩৩০ কোটি ডলার। এই আকার ৫ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য বিল গেটস ও মেলিন্ডা গেটসের।
সূত্র: ভক্স ডট কম, রয়টার্স