নিজস্ব প্রতিবেদক
নগরবাসীর স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার বিক্রির প্রশিক্ষণ দেওয়া আওতায় নিয়ে আসা ও তারা সঠিকভাবে খাবার বিক্রয় করছে কি-না সে বিষয়টি নিয়মিত তদারকি জরুরি বলে উল্লেখ করেছেন আলোচকরা।
বুধবার(১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয়, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সম্মিলিত উদ্যোগে আয়োজিত নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বিক্রয় সংক্রান্ত ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
বক্তারা বলেন, স্ট্রিট ফুড ভেন্ডর বা ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতাদের কাছ থেকে খাবার কিনে খায়নি এমন মানুষ খোঁজে পাওয়া যাবে না। কেউ যেমন শখের বশে বিভিন্ন রকম মুখরোচক খাবার তাদের কাছ থেকে কেনেন আবার অনেকে ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতাদের ওপর নির্ভর করেন তাদের প্রতিদিনের বাজারের জন্য। কিন্তু অনেক ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতাদের মধ্যে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাদ্য বিক্রির ক্ষেত্রে দুর্বলতা দেখা যায়।
আয়োজকরা জানান, এই বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ‘ঢাকা ফুড সিস্টেম’ প্রকল্পের আওতায় তিন মাস মেয়াদি একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এর আওতায় ডিএনসিসির ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভাসানী রোডের ১০০ জন ফুড ভেন্ডরের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও খাদ্যের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা বিষয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এটি ডিএনসিসি এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা কর্তৃক যৌথভাবে গৃহীত একটি উদ্যোগ। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর জয়নাল আবেদীন বলেন, আমরা ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতাদের একটি ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসতে কাজ করছি। ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতাদের কোনো তথ্য না থাকায় চাইলেও তাদেরকে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে পারছি না। আমরা ডিএনসিসির সঙ্গে কাজ করছি, যাতে তাদের একটি লাইসেন্সের আওতায় আনা যায়।
বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটির সদস্য প্রফেসর ড. আবদুল আলীম বলেন, খাবারে জীবাণু সংক্রমণ হলে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়বে এবং তাদের কাছ থেকে খাবার কিনে খেতে চাইবে না। ফলে তাদের ব্যবসার ক্ষতি হবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার চিফ টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার জন টেইলর বলেন, আপনারা প্রতিদিন গড়ে প্রায় তিন হাজার মানুষের কাছে খাবার বিক্রি করেন। আপনারা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার বিক্রির মাধ্যমে তাদের সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে অবদান রাখছেন। আপনারা যখন পরিচ্ছন্ন উপায়ে খাবার রান্না ও বিক্রি করবেন তখন এলাকাবাসী নিরাপদ বোধ করবেন।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, খাবার বিক্রির জায়গা পরিষ্কার রাখা, পোকা-মাকড় দমনের জন্য প্রয়োজনীয় ও সরকার অনুমোদিত ওষুধ-কীটনাশক ব্যবহার করা, ক্ষতিকর রং ও নিম্ন মানের পণ্য ব্যবহার থেকে বিরত থাকা, সকল উপকরণ, বাসনপত্র, মোছামুছির কাপড় সব পরিষ্কার রাখা, ডিটারজেন্ট ও গরম পানি ব্যবহার করে বাসনপত্র পরিষ্কার করা ইত্যাদি বিষয়গুলোর উপর জোর দিতে হবে।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ভাসানী রোডের ভ্রাম্যমাণ খাদ্য বিক্রেতারা অংশগ্রহণ করেন। তারা প্রশিক্ষণ শেষে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে খাবার বিক্রি করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। কর্মশালা শেষে অংশগ্রহণকারীদের মাস্ক ও ময়লা ফেলার জন্য ঝুড়ি উপহার দেওয়া হয়।
বিএসডি/এমএম