জেলা প্রতিনিধি:
রাজবাড়ী সদর উপজেলার নদী তীরবর্তী মিজানপুর ইউনিয়নের একটি গ্রাম চর সেলিমপুর। এই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে প্রমত্তা পদ্মা। গ্রামটি নদীর মাঝখানে হওয়ায় চলাচলের মাধ্যম নৌকা আর বাঁশের সাঁকো। শুকনো মৌসুমে চলাচল করা গেলেও বর্ষা মৌসুমে বিপাকে পড়তে হয় গ্রামবাসীদের। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে শিক্ষার্থী এবং গ্রামবাসী।
জানা গেছে, নদীর মাঝখানের ওই গ্রামটিতে রয়েছে চর সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘ দেড় বছর করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। কিন্তু ১২ সেপ্টেম্বর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খুললেও শিক্ষার্থীদের দেখা যায়নি। স্কুলটি নদীর পাশে হওয়ায় রয়েছে ভাঙন ঝুঁকি। সেইসঙ্গে স্কুলে যাওয়ার একমাত্র পথ ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো হওয়ায় প্রথম দিন থেকেই বিদ্যালয়ের উপস্থিতি কম।
সরেজমিনে দেখা যায়, বেড়িবাঁধ থেকে মিনিট পাঁচেক হাঁটলেই চোখে পড়ে ৪০ মিটার লম্বা একটি নড়বড়ে বাশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়েই স্কুলে যেতে হয় শিক্ষার্থীদের।
গ্রামবাসীরা জানান, পদ্মাপাড়ের এই দ্বীপে দেড়শ পরিবারের বাস। বছরের পর বছর এমন ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হতে গিয়ে বৃদ্ধ ও শিশুদের দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয়। নদীর পানি বাড়লে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়।
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, সাঁকো মেরামতে সরকারি কোনো অনুদান পাওয়া যায় না। প্রতি বছরই দুই পাড়ের বাসিন্দারা স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ করেন। চাঁদা তুলে কেনেন বাঁশ খুঁটি। জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের আগে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলেও পরে তা আর বাস্তবায়ন হয় না। অবিলম্বে একটি স্থায়ী সেতু অথবা একটি ইটের রাস্তা নির্মাণে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।
স্থানীয় বাসিন্দা নায়েব আলী বলেন, প্রতি বর্ষায় যাতায়াতের জন্য আমরা গ্রামের লোকজন নিজ খরচে বাঁশের সাঁকোটি তৈরি করি। একটি সাঁকো এক বর্ষা পার করার পর আর ব্যবহার করা যায় না। স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে একটি ব্রিজের জন্য বেশ কয়েকবার ধর্ণা দিয়েছি। তবে কাজ হয়নি।
স্কুলের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুজন শেখ বলেন, স্কুলে যাওয়ার রাস্তাটি খুব খারাপ। বড় একটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো পার হতে হয়। আমার ছোট বাচ্চার ক্ষেত্রে এই সাঁকো পার হওয়া সম্ভব নয়।
মিজানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আতিয়ার রহমান বলেন, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট দফতরে মৌখিকভাবে জানিয়েছি। আপাতত মাটি ভরাট করে একটা ইটের রাস্তা করে দেওয়ার জন্য দাবি জানিয়েছি। শিগগিরই লিখিতভাবে জানানো হবে।
চর সেলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইমান আলী ফকির বলেন, আমার বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১০৮ জন শিক্ষার্থী। করোনার পর স্কুল খুললেও নদীভাঙন ও স্কুলে আসার পথ ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে কয়েকবার জানানো হয়েছে। অন্তত শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে হলেও একটি ব্রিজ করে দেওয়া হোক। কিন্তু কাজ হয়নি।