করোনাভাইরাসে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে ভারতে। করোনায় একের পর এক সংক্রমণ আর মৃত্যুর রেকর্ড ভেঙে চলেছে দেশটি। কোনোভাবেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না। দেশটিতে অক্সিজেনের তীব্র আকাল ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরও হৃদয়বিদারক করে তুলেছে।
এদিকে, ভারতের দিল্লিতে অক্সিজেন সংকটে রয়েছেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়ার বড় বোন বন্যা। ফেসবুকে দেওয়া দীর্ঘ এক স্ট্যাটাসে এমনটাই জানিয়েছেন এই অভিনেত্রী। তবে তার বড় বোন করোনায় আক্রান্ত নাকি অন্য কোনো অসুস্থতায় ভুগছেন, সে সম্পর্কে কিছু জানাননি ফারিয়া।
তিনি লিখেছেন, আমার বড় বোন আমার ১৬ বছর আর মেজো বোন প্রায় ১২ বছরের বড়! আমার সারাজীবন কষ্ট ছিল, অন্যদের বোনদের সঙ্গে যেমন বন্ডিং থাকে আমার নাই! ইনফ্যাক্ট আমার বড় দুইবোনের নিজেদের মধ্যে যেই বন্ডিং সেটা আমার সঙ্গে নাই! আমার বয়স যখন সাড়ে তিন বড় আপুর বিয়ে হয়ে গেছে, ৫ বছর বয়সে ছোট আপু পড়াশুনার জন্য বাসার বাইরে, তারপর তো বিয়েই হয়ে গেল আপুর! আমি সেভাবে কখনো আমার বোনদের সঙ্গে থাকি নাই। বরং আমার ভাগনে-ভাগ্নি আমার বন্ধু!
বয়সে যুগের পার্থক্য থাকায় আমার সঙ্গে ওদের একটা জেনারেশন গ্যাপ সব সময়ই প্রকট! তার উপর তাদের সব সময় মনে হতো ‘ভালো ফ্যামিলির মেয়েরা মিডিয়াতে কাজ করে না’, এইটা নিয়ে আমার দুঃখের সীমা-পরিসীমা নাই! কখনো উৎসাহ দূরের কথা, পারলে দুই-চারটা কথা শোনানোর সুযোগ পেলে মিস করে না! কষ্টের উপর ডাবল কষ্ট!
কিন্তু পরশু আমার বড় আপু যখন বললো, ‘তৃপ্তি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে’ আমি জানি ফোনটা রেখে আমি কতক্ষণ হাউ-মাউ করে কাঁদছি! আমার মেজোবোন কল করে কাঁদতে কাঁদতে যখন বললো- ‘তৃপ্তি আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছে, আমি এতো মানুষকে খাওয়াই, আমার বোন বিদেশে শুয়ে খাওয়ার কষ্ট পাচ্ছে’ কি বলে আমার বোনকে সান্তনা দিবো!
আমার বাবা ডাক্তার ছিল। সবার সব অসুস্থতায় বাবার কাছে আসতো! আজকে দিল্লিতে আমার বোন অক্সিজেনের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে! আমরা হেল্পলেস, কিছু করার নাই। আমরা পরশু পর্যন্ত মার কাছ থেকে পুরা বিষয়টা গোপন করে রেখেছি। কালকে মেজোবোন বললো, ‘তৃপ্তি আম্মু দোয়া করলে যদি বন্যা ভাল হয়ে যায়, চল আমরা আম্মুকে জানাই।’ গত দুইদিন আমার মার মুখের দিকে তাকানো যায় না। তার বড় মেয়ে, ১৮ বছর বয়সে তার মেয়ে হইসে। যখন সে নিজেই বাচ্চা…। সেই মেয়ের এই অবস্থা তো তার সহ্য হয় না। তাও এতো দূরে এখন!
আমরা আসলে কাছের মানুষদের উপরই বেশি অভিমান করি, কষ্ট পাই, রাগ করি। আর সম্ভবত সেজন্যেই তারা কাছের মানুষ! দূরের মানুষের সঙ্গে আর কিসের রাগ! কিন্তু কিছু ঘটনা আসে, তখন বুঝতে পারি আমাদের জীবনে তারা কত স্পেশাল, তাদের আমরা কত ভালোবাসি, তারা কত কিছু করে আমাদের জন্য…।
সবার কাছে একটা অনুরোধ, আপনার দোয়ার সময় আমার বড় আপুর কথা একটু স্মরণ করবেন। ঢাকায় বসে আসলে দোয়া করা বা দোয়া চাওয়া ছাড়া আমাদের কিছু করার নাই।