আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
সামরিক শাসনবিরোধী মিলিশিয়া বাহিনীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর তীব্র সংঘর্ষে ভারত সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের একটি শহরের বেশিরভাগ মানুষ তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ছোড়া গোলায় ওই শহরের বাড়ি-ঘর আগুনে পুড়ছেও বলে বুধবার স্থানীয় বাসিন্দা ও গণমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সম্প্রদায়ের একজন নেতা বলেছেন, মিয়ানমারের চিন রাজ্যের থ্যান্টলাং শহরে সাধারণত প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই আশ্রয়ের খোঁজে আশপাশের এলাকাসহ ভারতে পালিয়ে গেছেন।
প্রতিবেশি ভারতের মিজোরাম রাজ্যের একটি সিভিল স্যোসাইটি গ্রুপের প্রধান বলেছেন, গত সপ্তাহে মিয়ানমারের দু’টি জেলা থেকে মিজোরামে সাড়ে ৫ হাজার মানুষ পালিয়েছেন। তারা সামরিক অভিযান থেকে বাঁচতে দেশ ছেড়ে মিজোরামে পৌঁছেছেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানে গণতন্ত্রপন্থী প্রবীণ নেত্রী অং সান সু চি নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। সামরিক অভ্যুত্থানের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিক্ষোভ, ধর্মঘট, প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছে হাজার হাজার মানুষ। জান্তা-বিরোধী মিলিশিয়া গোষ্ঠীও গড়ে উঠেছে।
গত সপ্তাহে থ্যান্টলাংয়ে লড়াইয়ের সময় অন্তত ২০টি বাড়িঘরে আগুন ধরে যায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে ভবনগুলো আগুনে পুড়তে দেখা যায়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম মিয়ানমার নাও বলেছে, আগুন নেভানোর চেষ্টার সময় একজন খ্রিস্টান যাজককে গুলি চালিয়ে হত্যা করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী।
যদিও দেশটির সরকারি গণমাধ্যম যাজক হত্যার খবরের বিরোধিতা করেছে। দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার বলেছে, ওই যাজকের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করা হচ্ছে এবং প্রায় ১০০ সন্ত্রাসী সৈন্যদের ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে।
স্থানীয় এক সম্প্রদায়ের নেতা সালাই থ্যাং বলেছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে গত কয়েক সপ্তাহের সংঘাতে অন্তত চারজন বেসামরিক নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। সামরিক একটি ঘাঁটি মিলিশিয়ারা দখলে নেওয়ায় বিমান হামলাও চালিয়েছে সেনাবাহিনী।
মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরোধী স্থানীয় মিলিশিয়া গোষ্ঠী দ্য চিন ডিফেন্স ফোর্স এক বিবৃতিতে সরকারি ৩০ সৈন্যকে হত্যার দাবি করেছে। তবে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই দাবি স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত হতে পারেনি এবং মন্তব্য জানতে চাইলেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্র কোনও সাড়া দেননি।
তবে নিহত খ্রিস্টান যাজকের একজন স্বজন রয়টার্সকে বলেছেন, থ্যান্টলাংয়ে শুধুমাত্র মুষ্টিমেয় কিছু পরিবার রয়ে গেছে; যাদের মধ্যে ওই যাজকের অনাথ আশ্রমের প্রায় ২০ শিশুও আছে।