আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আরোপিত সকল একতরফা নিষেধাজ্ঞা ও বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার দাবি জানিয়েছে চীন। বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্টেট কাউন্সিলর ওয়াং ই যত দ্রুত সম্ভব এসব নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার এই দাবি জানান।
আফগানিস্তান ইস্যুতে বুধবার ভার্চুয়াল বৈঠকে মিলিত হয় জি২০ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। সেখানেই চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই দাবি তোলেন। বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ভার্চুয়াল বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই বলেছেন- আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার অবশ্যই অবসান হতে হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আফগানিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দেশটির জাতীয় সম্পদ এবং এটির মালিক আফগান জনগণ। এই রিজার্ভ আফগানিস্তানের মানুষকেই ব্যবহার করতে দিতে হবে। একইসঙ্গে দেশটির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টিতে মূল্যবান এই বৈদেশিক রিজার্ভকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
২০ বছর পর গত ১৫ আগস্ট আফগানিস্তান দখলে নেয় তালেবান। চলতি মাসের শুরুর দিকে তালেবান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার ঘোষণা দেয়। আফগান সব সম্প্রদায় ও গোত্রের প্রতিনিধিত্বমূলক প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও প্রধান প্রধান মন্ত্রণালয়গুলোতে তালেবানের কট্টরপন্থী এবং অনুগতদেরই নিয়োগ দেওয়া হয়।
তবে তালেবান সরকার গঠন করলেও এখনও কোনো দেশই সেই সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। পাকিস্তান এবং কাতার অবশ্য তালেবানের শাসনাধীন আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দিতে এবং তাদের সঙ্গে কাজ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। এ নিয়ে জোরেশোরে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে পাকিস্তান।
তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর চীন জানিয়েছিল, বেইজিং আফগানিস্তানের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগকে স্বাগত জানায়। চীন আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার’ নীতি নেবে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেসময় জানিয়েছিল, ‘তালেবান বারবার চীনের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার আশা প্রকাশ করেছে এবং তারা আফগানিস্তানের পুনর্গঠন ও উন্নয়নে চীনের অংশগ্রহণের অপেক্ষায় আছে। আমরাও তাদের এমন ইচ্ছাকে স্বাগত জানাই।’
অবশ্য তারও আগে তালেবানের এক প্রতিনিধিদল জুলাইয়ে চীন সফর করেছিল। ওই সফরে তালেবান নেতারা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময় ওই বৈঠককে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তালেবানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বলে বিবেচনা করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, সামরিক ক্ষমতার জোরে কাবুলের পশ্চিমা সমর্থিত সরকারকে উৎখাত করে পুরো আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষিত বিপুল অংকের আফগান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আটকে দেয় বাইডেন প্রশাসন।
আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশির ভাগই রয়েছে ফেডারেল রিজার্ভসহ একাধিক বিদেশি ব্যাংকে। তাছাড়া বেশ ভালো পরিমাণ স্বর্ণও মজুত আছে ফেডারেল রিজার্ভে। তালেবান বাহিনী আফগানিস্তানের ক্ষমতা নেওয়ার পর সেই অর্থ ফ্রিজ করে মার্কিন সরকার।
এদিকে, মার্কিন রিজার্ভে অর্থ আটকে থাকার পাশাপাশি আফগানিস্তানে বন্ধ রয়েছে বিদেশি সহায়তাও। আটকে আছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও জাতিসংঘের অর্থ। নগদ অর্থের সংকট চলার কারণে আফগানিস্তানে খাবার, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে।