আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারত ও পাকিস্তান- প্রতিবেশী দু’টি দেশের মধ্যকার আদায়-কাঁচকলায় সম্পর্কের বিষয়টি কারোর অজানা নয়। সম্প্রতি জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে দুই দেশের মধ্যকার তিক্ততা।
অসহনশীল মনোভাব ও ধর্মীয় সাম্প্রদায়িতকতার মত ইস্যুতে বহু বছর ধরে পরস্পরকে দোষারোপ করে আসছে ভারত ও পাকিস্তান। এই একই ইস্যুতে জাতিসংঘে চলমান সাধারণ অধিবেশনেও পরস্পরের তীব্র সমালোচনা করেছে এই দুই দেশ, যার শুরু হয়েছে ইমরান খানের বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে।
শুক্রবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বিজেপি শাসিত ভারতকে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম জনগণের জন্য ‘ভীতিপ্রদ’ স্থান হিসেবে উল্লেখ করেন।
নিজ বক্তব্যে ইমরান খান আরও বলেন, ‘বর্তমানে ইসলামভীতির সবচেয়ে ব্যাপক ও নিকৃষ্ট রূপটি আমরা ভারতে দেখতে পাচ্ছি।’
‘ভারতে বর্তমান ক্ষমতাসীন বিজেপি-আরএসএস যেভাবে বিদ্বেষপূর্ণ হিন্দুত্ববাদ ছড়াচ্ছে, তা দেশটিতে বসবাসরত ২০ কোটি মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে এবং দেশটির অন্যান্য ধর্মাবলম্বী জনগণের মধ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও সহিংসতা উস্কে দিচ্ছে।’
নিজ বক্তব্যে কাশ্মিরের প্রসঙ্গ টানেন পাক প্রধানমন্ত্রী। সংবিধান সংশোধনের করে কাশ্মিরের স্বায়ত্বশাসন বাতিলে মাধ্যমে ভারতের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই রাজ্যটির জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিন।
ইমরান আরও অভিযোগ করেন, ভারতের সঙ্গে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে বার বার মানবাধিকার লঙ্ঘণের পরও দায়মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে ভারত।
পাকিস্তান অবশ্য বরাবরই ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বক্তব্য দেয় ভারত অনেক সময় সেসব অগ্রাহ্য করে এবং জবাব দেওয়া থেকে বিরত থাকে। তবে এবার ইমরানের বক্তব্যের শক্ত প্রতিবাদ জানিয়েছেন জাতিসংঘে ভারতের দূত এবং ফার্স্ট সেক্রেটারি স্নেহা দুবে।
জাতিসংঘে পাক প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে স্নেহা দুবে বলেন, ‘পাকিস্তান হলো এমন দেশ যারা নিজেরা আগুন লাগায় এবং তারপর আবার নিজেরাই দমকলকর্মী হয়ে সেই আগুন নেভাতে আসে।’
‘এই দেশটি বরাবরই জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় এবং লালন-পালন করে আসছে শুধুমাত্র একটি আশায়- জঙ্গি ও উগ্রপন্থিরা যেন প্রতিবেশী দেশসমূহে নাশকতা চালানোর মাধ্যমে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
বিজেপি শাসনামলে ভারতের মুসলিমরা আতঙ্কে আছে বলে যে অভিযোগ করেছেন ইমরান খান, তা খণ্ডন করে স্নেহা দুবে বলেন, ‘পাকিস্তান তার নিজের দেশের সংখ্যালঘুদের সঙ্গে কী পরিমাণ নিপীড়ণমূলক আচরণ করে, তা সবাই জানে। তাদের নিপীড়ণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে।’
স্নেহা দুবে বলেন, ‘ভারত একটি বহুত্ববাদী গণতান্ত্রিক দেশ এবং ভারত সরকারের অনেক উচ্চপদে ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা কাজ করছেন, যা পাকিস্তানে কল্পনাও করা যায় না।’
জাতিসংঘে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যখন এই বাহাস চলছিল, সে সময় হোয়াইট হাউসে কোয়াড বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সূত্র : এএফপি, আল আরাবিয়াহ