ঢাকা কলেজ:
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী এর সচিব ড. মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন ও উপ-পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) মো. বাদশা হোসেনকে কর্মচারী ইউনিয়নের কিছু কর্মচারী কর্তৃক লাঞ্ছনার প্রতিবাদে ঢাকা কলেজে নিন্দা ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের আয়োজনে কলেজের শহীদ আ.ন.ম নজিব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে এই প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার এবং প্রতিবাদ সভা পরিচালনা করেন শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মোঃ আব্দুল কুদ্দুস সিকদার।
প্রতিবাদ সভায় বক্তারা বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নানান সময়ে লাঞ্ছনা এবং নির্যাতনের শিকার হতে হয়। প্রতিটি ঘটনার পর উপযুক্ত এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় বারবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। একইভাবে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব এবং উপ-পরিচালকের উপরও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা নামধারী কতিপয় দুষ্কৃতিকারী হামলা করেছে। এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং ধৃষ্টতাপূর্ণ। এছাড়াও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের ওপর দুর্বৃত্তায়ন আর চলতে দেয়া হবে না বলেও হুঁশিয়ারি জানান বক্তারা।
সভায় বক্তব্য রাখেন কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ.টি.এম. মইনুল হোসেন। তিনি বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ওপর হামলার পর যথোপযুক্ত বিচার না হওয়ায় বারবার এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। আমরা ইতোপূর্বেও দেখেছি অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা ন্যায়বিচার বঞ্চিত হয়েছে। আমরা চাই না এধরনের ঘটনা আর ঘটুক। অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে।
এছাড়াও অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের লাঞ্ছিত হতে হয় বলেও অভিযোগ করেন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি বলেন, কিছুদিন পরপরই দেখি আমাদের সহকর্মীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। অনেকেই অন্যায় আচরণের শিকার হয়েও মুখ বুজে তা সহ্য করতে হচ্ছে। এ ধরনের বৈষম্য থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সবাই একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দুর্বৃত্তদের রুখে দিতে হবে।
প্রতিবাদ সভায় শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের লাঞ্ছনার প্রতিবাদে নিন্দা প্রস্তাব পাশ করা হয় ও চারটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেগুলো হলো-
১. রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে সংঘটিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানানো এবং অভিযুক্তদের বরখাস্তকরণ সহ তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের সহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান কে অনুরোধ করা।
২.ঢাকা কলেজ থেকে একটি প্রতিনিধিদল রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডেরগমন করে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করা।
৩.ঘটনা পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তীতে প্রয়োজনে কঠোর কর্মসূচি পালন করা।
৪. এবং সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত গুলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা।
এছাড়াও এসময় প্রতিবাদ সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক পুরঞ্জয় বিশ্বাস, বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সানজিদা আক্তার, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, ড. মোঃ জিল্লুর রহমান, আ ক ম রফিকুল আলম, মোঃ আলমগীর মিয়া, শিক্ষক পরিষদের কোষাধ্যক্ষ মোঃ ওবায়দুল করিম, আদনান হোসেন, মোঃ মনসুর আলী সহ ঢাকা কলেজে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী৷
জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর (রোববার) সন্ধ্যার আগে বোর্ড সচিব প্রফেসর ড. মোয়াজ্জেম হোসেন, হিসাব বিভাগের উপপরিচালক বাদশা হোসেনসহ তিন কর্মকর্তা সচিবের কক্ষে সংক্ষিপ্ত সভা করছিলেন।
এ সময় অফিসার্স কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওয়ালিদ হোসেন, মানিক চন্দ্র সেনসহ কয়েকজন কর্মকর্তা জোর করে সচিবের কক্ষে প্রবেশ করেন। অফিসার্স সমিতির নেতারা প্রথমে হিসাব বিভাগের উপপরিচালক বাদশা হোসেন কয়েকজন কর্মকর্তার সার্ভিস ফাইলের কাগজপত্র গোপনে ফটোকপি করেছেন অভিযোগ তুলে তার উপর চড়াও হন৷
এ নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কল্যাণ সমিতির কর্মকর্তাদের চরম বাগ্বিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে কল্যাণ সমিতির নেতারা সচিবসহ তিন কর্মকর্তাকে টেনে-হিঁচড়ে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। খবর পেয়ে অন্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পুলিশ নিয়ে গিয়ে সচিবসহ তিন কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন।
বিএসডি/আইপি